আফগান এবং পাকিস্তানি জিহাদিরাই মূলত আইএস-কে‌র সদস্য।

কাবুল বিমানবন্দরে হামলার হুমকি শেষ পর্যন্ত বাস্তবে পরিণত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ওই হামলায় ১৩ মার্কিন সেনাসহ শতাধিক প্রাণহানি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশ কাবুল বিমানবন্দরে হামলার ব্যাপারে কয়েকদিন ধরেই সতর্ক করে আসছিল।

আফগানিস্তানে ব্রিটিশ বাহিনীর সাবেক অধিনায়ক কর্নেল রিচার্ড কেম্প বিবিসিকে বলছেন, যেদিন কাবুল বিমানবন্দর থেকে মানুষজনকে সরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সেদিন থেকেই সেখানে এমন সন্ত্রাসীয় হামলার হুমকি তৈরি হয়েছে।
 
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাটো মিত্র হিসেবে আফগান যুদ্ধে অংশ নেওয়া কেম্প বলেছিলেন, ‘সন্ত্রাসী হামলার এই হুমকি যে কারো কাছ থেকে আসতে পারে। সেটা হতে পারে তালেবান, ইসলামিক স্টেট (আইএস) কিংবা আল-কায়েদা। যে কোনটি হামলা করতে পারে।’

কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে যে গোষ্ঠীটির নাম রাজনীতিক এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মুখে মুখে ফিরছে সেটি হলো তথাকথিত ইসলামিক স্টেট অব খোরাসান প্রভিন্স বা সংক্ষেপে আইএস-কে। গতকালের হামলার দায় ইতোমধ্যে স্বীকার করে নিয়েছে ইসলামিক স্টেট।

কারা এই আইএস-কে

আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী যে নাম ব্যবহার করে তা হলো ইসলামিক স্টেট অব খোরাসান প্রভিন্স। এখানে খোরাসান শব্দটি এসেছে আধুনিক আফগানিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ে যে অঞ্চল তার প্রাচীন নাম থেকে।

আইএস-কে সশস্ত্রগোষ্ঠীর জন্ম ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে। এর মূল ঘাঁটি আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় নানগারহার প্রদেশে। পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এই এলাকাটি মাদক ও মানুষ পাচারের জন্য কুখ্যাত।

এই গোষ্ঠীর সদস্যরা মূলত আফগান ও পাকিস্তানি জিহাদি। আফগান তালেবান থেকে দলত্যাগী অনেকে আইএস-কে‌’তে যোগ দিয়েছে। আফগানিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত সরকারের হাতে পর্যুদস্ত হওয়ার আগে এক সময় এই গোষ্ঠীর যোদ্ধা ছিল তিন হাজারেরও বেশি।

তালেবানের চেয়েও কট্টর

তালেবানের চেয়ে আইএস-কে বহুগুণ বেশি কট্টরপন্থী। তারা আফগান তালেবানকে শত্রু বলে মনে করে। ইসলামী বিধিবিধানের তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী এই গোষ্ঠীটি মনে করে ‘মুরতাদ’ হিসেবে তালেবানকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো ‘জায়েজ’ (বৈধ বা আইনসিদ্ধ)।

গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগানিস্তানের তালেবানের মধ্যে যে শান্তি চুক্তি হয় আইএস-কে তার নিন্দা জানায় এবং বলে যে, তারা আফগানিস্তানে তাদের লড়াই অব্যাহত রাখবে।

একইসঙ্গে তালেবানের আফগানিস্তান দখলকে নাকচ করে দিয়ে সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর দাবি এক গোপন চুক্তির অংশ হিসেবে আমেরিকানরা আফগানিস্তানকে তালেবানের হাতে তুলে দিয়েছে।

বিবিসির নিরাপত্তা বিশ্লেষক ফ্র্যাংক গার্ডনার বলছেন, এরপরও তালেবানের সাথে আইএস-কে’র এক ধরনের যোগাযোগ রয়েছে। মূলত তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে। গবেষকদের উদ্ধৃত করে তিনি বলছেন, আইএস-কে এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে হাক্কানি গোষ্ঠীর সাথে রয়েছে তালেবানের সম্পর্ক।

মার খেয়েও ঘুরে দাঁড়িয়েছে আইএস-কে

২০১৯ সালে আইএস-কে সামরিকভাবে বড় ধরনের পরাজয়ের মুখোমুখি হয় এবং ২০২০ সালের এপ্রিলে তাদের বেশ কয়েকজন নেতা আটক হন। তবে এরপরও আইএস-কে তার শক্তি ফিরে পায় এবং কাতারে তালেবানের সাথে শান্তি আলোচনা চলাকালীন আফগানিস্তানে বেশ কয়েকটি হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে।

ফ্র্যাংক গার্ডনার জানাচ্ছেন, শুধু ২০২০ সালে আইএস-কে আফগানিস্তানে ২৪টি হামলা চালিয়েছে। মেয়েদের স্কুল, হাসপাতাল, এমনকি হাসপাতালের ম্যাটারনিটি ওয়ার্ডেও আইএস-কে হামলা চালিয়েছে যেখানে তারা গর্ভবতী নারীদের গুলি করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

তারা ২০১৮ সালে ইরানের মধ্যেও একটি হামলা চালায়। সাংগঠনিক দিক থেকে আইএস-কে শুরুতে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানকে নিয়ে গঠিত হলেও ২০১৯ সালের মে মাসে ইসলামিক স্টেট ‘পাকিস্তান প্রদেশ’ নামে স্বতন্ত্র একটি গোষ্ঠীর নাম ঘোষণা করা হয়।

আইএস-কে যাদের বিরুদ্ধে হামলা করেছে তারা হলো আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনী, আফগান রাজনীতিক, তালেবান, শিয়া মুসলমান ও শিখসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংখ্যালঘু, মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী এবং দেশটিতে কর্মরত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও আর ত্রাণ সংস্থা।

এএস