আফগানিস্তানের নতুন শাসকগোষ্ঠী তালেবান দেশটির নতুন অর্থমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদে জ্যেষ্ঠ অভিজ্ঞ দু’জনকে নিয়োগ দিয়েছে। পশ্চিমা সামরিক বাহিনীর বিদায়ে পাওয়া আকস্মিক জয়ের পর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ গঠনে মনোনিবেশ করা তালেবান বুধবার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে অভিজ্ঞদের মন্ত্রী নিয়োগ দিতে যাচ্ছে বলে তালেবানের দু’জন সদস্য জানিয়েছেন।

অপ্রত্যাশিতভাবে পাওয়া দ্রুতগতির বিজয়ের কারণে শাসন কাজ চালাতে গিয়ে রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে আফগান সশস্ত্র এই ইসলামী কট্টরপন্থী গোষ্ঠীকে। শীর্ষ নেতাদের সরকারে জায়গা দেওয়ার পাশাপাশি কাবুল সচল রাখতেও নিম্ন-স্তরের প্রশাসকের ওপরও ভরসা করছে তালেবান।

আনুষ্ঠানিকভাবে অর্থ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিয়োগের ঘোষণা না দিলেও তালেবানের একজন কমান্ডার রয়টার্সকে বলেছেন, সাময়িকভাবে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আফগানিস্তানের সংবাদ সংস্থা পাজহোক মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে বলেছে, অর্থমন্ত্রী হিসেবে গুল আঘা এবং ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সদর ইব্রাহিমকে নিয়োগ দিয়েছে তালেবান।

তালেবানের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে আলজাজিরা বলেছে, গুয়ানতানামো কারাগারের সাবেক বন্দি মোল্লা আব্দুল কাইয়ুম জাকিরকে 
আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইসলামী এই গোষ্ঠী সব সরকারি অফিস, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ এবং পার্লামেন্ট দখলে নেওয়ার পর কাবুলে তালেবানের একজন কর্মকর্তা চলতি সপ্তাহেই প্রধান প্রধান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের নিয়োগ দেওয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছেন।

তালেবানের জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক কৌশলীর দায়িত্ব পাওয়া ওই কর্মকর্তা বলেছেন, মাত্র শেষ হওয়া ২০ বছরের যুদ্ধের অভিজ্ঞ কিছু কমান্ডারের মধ্যে থেকে প্রাদেশিক গভর্নরদের নির্বাচিত করা হবে। তালেবানের একজন কমান্ডার প্রধান প্রধান দফতরের মন্ত্রীদের বাছাইয়ের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে তাদের এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।

‘গত রাতে আমরা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বৈঠক করেছি, আমরা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। কিন্তু তাদের কাউকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগ বা ঘোষণা দেওয়া হয়নি’— আলোচনার বিস্তারিত এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত না হওয়ায় নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে এসব তথ্য দিয়েছেন ওই কমান্ডার।

পরিচিত মুখ

কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, সরকারি পদে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে; তাদের বেশিরভাগই দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দ ও কান্দাহার প্রদেশের তালেবানের সামরিক নেতা।

আফগানিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে তালেবানের নিয়োগের ব্যাপারে অসলোর ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব আর্মড গ্রুপের সহ-পরিচালক অ্যাশলে জ্যাকসন বলেন, ‘তারা পরিচিত নাম। তারা (তালেবান) ব্যাপক বৈচিত্র্য আনতে পারছে না অথবা বেসামরিক সরকারের ইচ্ছা প্রকাশ করছে না।’

গুল আঘাকে গুল আঘা ইশাকজাই নামে দেখা যেতে পারে। তালেবানের আর্থিক কমিশনের প্রধান তিনি। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার কবলে আছেন তিনি। জাতিসংঘ এবং ইন্টারপোলের নিষেধাজ্ঞার নোটিশে বলা হয়েছে, তিনি তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মোল্লা ওমরের বাল্যবন্ধু ছিলেন। এক সময় তার অনুমোদন ছাড়া কেউ মোল্লা ওমরের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পেতেন না।

তালেবানের যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞ কমান্ডার জাকির মোল্লা ওমরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। ২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরুর পর জাকির গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং কিউবায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কারাগার গুয়ানতানামো বেতে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বন্দি ছিলেন। 

পরবর্তীতে তাকে মুক্তি দিয়ে আফগান সরকারের হাতে হস্তান্তর করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত সদর ইব্রাহীমকে তালেবানের একজন প্রভাবশালী এবং বিশ্বস্ত নেতা হিসেবে মনে করা হয়। গত সপ্তাহে হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিসকে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

তালেবানের জ্যেষ্ঠ একজন নেতা বলেছেন, তালেবানের সাবেক নেতা মোল্লা আখতার মনসুরের সঙ্গে আর্থিক বিষয়ে কাজ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় জাওজান প্রদেশের বাসিন্দা ইদ্রিসের। মোল্লা আখতার ২০১৬ সালে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন।

তালেবান জ্যেষ্ঠ পদে অনুগতদের নিয়োগ দিলেও দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্য-স্তরের কর্মকর্তাদেরও কাজে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে। গোষ্ঠীটির মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করার এটাই উপযুক্ত সময়।

এসএস