ভারত করোনার সঙ্গে সহাবস্থান শিখে গেছে : ডব্লিউএইচও
গত প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময়ে করোনা মহামারির মধ্যে বসবাস করতে করতে ভারতের জনগণ করোনার সঙ্গে সহাবস্থান শিখে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) শীর্ষ গবেষক সৌম্য স্বামীনাথান।
এছাড়া, ভারতের করোনা টিকা কোভ্যাক্সিন এর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ দল বরাবর তাদের টিকা বিষয়ক যেসব তথ্য উপাত্ত পাঠিয়েছে, তাতে কমিটি সন্তুষ্ট এবং সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি নাগাদ জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য কোভ্যাক্সিন ডব্লিউএইচওর ছাড়পত্র পেতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি ভারতের নিউজ ওয়েবসাইট দ্য ওয়্যারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডব্লিউএইচওর এই শীর্ষ গবেষক বলেন,‘ভারতে এখন করোনা সংক্রমণের যে পরিস্থিতি, তাকে আমরা এন্ডেমিক স্তর বলতে পারি। এই স্তরে করোনা সংক্রমণ নিম্ন বা মাঝারি পর্যায়ে থাকবে, কিন্তু সেটি লাগামহীন অবস্থায় আর পৌঁছাবে না, যেমনটা আমরা কয়েক মাস আগে দেখেছিলাম।’
সাক্ষাৎকারে এ সম্পর্কে সৌম্য স্বামীনাথান আরও বলেন, ‘ভারত একটি বিশাল এবং জনবহুল দেশ। এই দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতারও তারতম্য আছে।’
‘ইতোমধ্যে করোনার দু’টি ঢেউ পেরিয়েছে ভারত। সে সময় যেসব এলাকা বেশি উপদ্রুত হয়েছিল, ভবিষ্যতে সেসব স্থানে সংক্রমণ কমে আসবে বলে আমাদের ধারণা। অন্যদিকে, যেসব অঞ্চলে বিগত সময়ে সংক্রমণ কম হয়েছে, কিংবা কম সংখ্যক মানুষ টিকা নিয়েছেন, আসন্ন দিনগুলোতে সেসব এলাকায় সংক্রমণ বাড়তে পারে।’
বর্তমানে ১২ বছরের কম বয়সীদের করোনা আক্রান্তের বিষয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দিনকে দিন এই দুশ্চিন্তা আরও বাড়ছে, কারণ এখনও সেভাবে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত কোনো করোনা টিকা বাজারে আসেনি।
এ সম্পর্কে সৌম্য স্বামীনাথান জানান, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও বয়স্কদের তুলনায় এ রোগে গুরুতর অসুস্থ হওয়া বা মৃত্যুর ঝুঁকি শিশুদের অনেক কম থাকে।
ডব্লিউএইচওর গবেষক বলেন, ‘করোনা যেহেতু অতি সংক্রামক একটি রোগ, তাই শিশুরাও ঝুঁকিমুক্ত নয়- এটা সঠিক। তবে বিভিন্ন দেশে শিশুদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ সংক্রান্ত যেসব তথ্য আমাদের হাতে এসেছে, তাতে দেখা গেছে, বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম, এবং আক্রান্ত হলেও গুরুতর অসুস্থ হওয়া বা মৃত্যুঝুঁকি প্রাপ্তবয়স্ক বা বয়স্কদের চেয়ে অনেক কম থাকে শিশুদের।’
‘তাই এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার সময় এখনও আসে নি। তারপরও, যেসব দেশ করোনায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য আলাদা মেডিকেল স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করছে তাকে আমরা স্বাগত জানাই। সবরকম বিপদের জন্য প্রস্তুতি থাকা ভালো।’
ভারত বায়োটেকের করোনা টিকা কোভ্যাক্সিন কবে নাগাদ ডব্লিউএইচওর ছাড়পত্র পাবে- দ্যা ওয়্যারের এ প্রশ্নের উত্তরে সৌম্য স্বামীনাথান বলেন, ‘ভারত বায়োটেক জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে তাদের টিকা সম্পর্কিত প্রাথমিক তথ্যাবলী ডব্লিউএইচওর বিশেষজ্ঞ দলের কাছে পাঠিয়েছিল। পরে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে হালনাগাদ আরও কিছু তথ্য পাঠিয়েছে তারা।’
‘বিশেষজ্ঞ দল বর্তমানে সেসব তথ্য খতিয়ে দেখছে। ভারত বায়োটেকের সঙ্গে যোগাযোগও অব্যাহত আছে। যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম দশ দিনের মধ্যেই সম্পন্ন হবে এবং আমি আশা করছি, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি নাগাদ কোভ্যাক্সিন জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার বিষয়ক ডব্লিউএইচওর ছাড়পত্র পেয়ে যাবে।’
‘অনেকেই হয়তো ভাবছেন, কোভ্যাক্সিনকে ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনেক সময় নিচ্ছে, কিন্তু ব্যাপারটি এমন নয়। এ পর্যন্ত যতগুলো কোম্পানি তাদের টিকার জন্য সংস্থার ছাড়পত্রের আবেদন করেছে, তাদের সবার ক্ষেত্রে কমবেশি একই সময়ে লেগেছে।’
ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আগমন নিয়ে যে উদ্বেগ চলছে , সে সম্পর্কে স্বামীনাথান বলেন, ‘এটা অনুমান করা খুবই শক্ত যে কখন এবং কোথায় করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হবে। তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার হলো- এসব ঢেউ করোনার নতুন পরিবর্তিত ধরন বা প্রজাতির আগমনের সম্ভাবনা কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে।’
‘এ ধরনের সংকট মোকাবিলার উপায় হলো টিকাদান কর্মসূচির আওতা ও গতি বাড়ানো এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।’
কবে নাগাদ বিশ্ব করোনা মহামারি থেকে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারে বলে মনে করছে ডব্লিউএইচও- প্রশ্নের উত্তরে সংস্থার শীর্ষ বিজ্ঞানী বলেন, ‘বিশ্বে বর্তমানে যে গতিতে টিকাদান চলছে, তাতে আগামী ২০২২ সালের শেষ নাগাদ পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে; আর এই মাইলস্টোন ছুঁতে পারলেই ধীরে ধীরে আমরা আবার স্বাভাবিক জীবনে প্রবেশ শুরু করতে পারব।’
সূত্র : পিটিআই, এনডিটিভি
এসএমডব্লিউ