ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে এক মুসলিম চুড়ি বিক্রেতাকে বেধড়ক মারপিট করেছে একদল কট্টর হিন্দুত্ববাদী যুবক। মুসলিম নাম গোপন করে হিন্দু এলাকায় চুড়ি বিক্রির অভিযোগে প্রকাশ্য দিবালোকে শত শত মানুষের সামনে ওই বিক্রেতাকে নিমর্মভাবে পিটিয়েছে তারা। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছে।

দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, রোববার মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে চুড়ি বিক্রি করছিলেন ২৫ বছর বয়সী এক মুসলিম যুবক। এ সময় হঠাৎ একদল যুবক সেখানে হাজির হয়ে তাকে নির্দয়ভাবে মারপিট করেন এবং তার কাছে থাকা ১০ হাজার রুপি ছিনিয়ে নেন।

এ ঘটনার পর ইন্দোর পুলিশ স্টেশনে শত শত মানুষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ক্ষোভ দেখান। পরে শেষ রাতের দিকে এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ওই মুসলিম যুবককে পিটুনির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র পুলিশি তদন্তের বরাত দিয়ে বলেন, ব্যবসা পরিচালনার জন্য ওই মুসলিম যুবক ভুয়া নাম ব্যবহার করছিলেন। স্থানীয়রা এটি বুঝার পর তার ওপর হামলা চালান। এই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক রঙ দেওয়া উচিত নয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাওয়া আক্রান্ত যুবকের নাম তসলিম। ইন্দোরের বনগঙ্গা এলাকার একটি জনাকীর্ণ সড়কে তাকে বেধড়ক মারপিট করছেন একদল যুবক। তাকে মারধরের সময় সাম্প্রদায়িক গালিগালাজ করতে শোনা যায়। এ সময় শত শত মানুষ আশপাশে উপস্থিত থাকলেও কেউ তাকে সহায়তায় এগিয়ে আসেননি।

ব্যাগ থেকে চুড়ি বের করে নেওয়ার সময় একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘যা খুশি নিয়ে নেন। তাকে আর এই এলাকায় দেখতে চাই না।’ শুধু তাই নয়, ওই ব্যক্তি আশপাশের সবাইকে এগিয়ে এসে মুসলিম চুড়ি বিক্রেতাকে মারধরের আহ্বান জানান। পরে তিন থেকে চারজন এগিয়ে এসে তাকে নির্দয়ভাবে মারপিট করেন।

পুলিশের কাছে দায়েরকৃত অভিযোগে চুড়ি বিক্রেতা তসলিম বলেন, তারা এসে প্রথমে আমার নাম জানতে চান। নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে মারধর শুরু করেন। তারা আমার কাছে থাকা ১০ হাজার রুপিও ছিনিয়ে নেন এবং চুড়ি ও অন্যান্য পণ্য ভাঙচুর করেন।

এ ঘটনার পর অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা, হামলা, ডাকাতি, ভয় দেখানো এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র বলেন, এই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক রঙ দেওয়া উচিত নয়। যদি একজন মানুষ তার নাম, বর্ণ এবং ধর্ম গোপন করে তাহলে তিক্ততা তৈরি হয়। আমাদের মেয়েরা চুড়ি পরে এবং বর্ষাকালে মেহেদি লাগায়। তিনি চুড়ি বিক্রেতা হিসেবে এসেছিলেন, সেখানে বিভ্রান্তি ছিল এবং তার আইডি দেখায় সত্য বেরিয়ে এসেছে।

এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া না দেখাতে স্থানীয়দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইন্দোর পুলিশ।

এসএস