নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট/ ছবি: সংগৃহীত

কয়েক হাজার পরিবারের কাছ থেকে শিশু সুরক্ষা তহবিলের টাকা ফেরত চাওয়ার বিষয়টি ‘ভুল’ প্রমাণিত হওয়ার পর এর দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করেছে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের নেতৃত্বাধীন সরকার।

শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) দেশটির রাজার কাছে মন্ত্রিসভার পদত্যাগপত্র জমা দেন ডাচ প্রধানমন্ত্রী রুট। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মার্ক রুট বলেন, `সাধারণ মানুষদের অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে এবং তাদের ভোগান্তি সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভুল যা হয়েছে তার দায় মন্ত্রিসভাকেই নিতে হবে... আমাদের যাত্রা এখানেই শেষ হলো।’

নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগ শহরে মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এমন এক সময়ে মার্ক রুট নেতৃত্বাধীন সরকার পদত্যাগ করল যখন করোনা মহামারির আঘাতে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে নেদারল্যান্ডস। ইউরোপের যে কয়েকটি দেশে করোনা সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি ঘটেছে, নেদারল্যান্ডস তার মধ্যে অন্যতম।

অবশ্য এ বিষয়ে আশ্বস্ত করে মার্ক রুট সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগামী মার্চে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে কাজ করবেন তিনি এবং তার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা। 

তবে এই কেলেঙ্কারিতে দায় থাকার কারণে অর্থমন্ত্রী এরিক উইবেসকে যে মন্ত্রীসভা থেকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে তাও নিশ্চিত করেন সদ্য পদত্যাগ করা নেদারল্যান্ডস প্রধানমন্ত্রী।

এই পদত্যাগ করা প্রতীকী কোনো কর্মসূচি কি না- সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে দৃশ্যত গম্ভীর রুট বলেন, ‘এটা মোটেও সে রকম কোনো পদক্ষেপ নয়।’

শিশু কল্যাণ তহবিলের সহায়তা নেয়ার ক্ষেত্রে হাজার হাজার পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতারণা বা জালিয়াতির অভিযোগ আনেন নেদারল্যান্ডসের কর কর্মকর্তারা।  ২০১২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার পরিবারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়। এমনকি সেই পরিবারগুলোকে সহায়তার অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য করা হয়। ফলে বহু পরিবার আর্থিক সঙ্কটে পড়ে।  বহু পরিবারকে ঘর হারাতে হয়, এমনকি বিয়ে বিচ্ছেদের মতো ঘটনাও ঘটে। 

কিন্তু পরে তদন্তে দেখা যায়, সঠিক জায়গায় স্বাক্ষর না থাকা বা ফরম পূরণের ক্ষেত্রে তুচ্ছ ভুলের কারণেও অনেক পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব পরিবারের একটি বড় অংশ অভিবাসী।

কর কর্মকর্তারা গতবছর প্রথমবারের মতো স্বীকার করেন, শুধু দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার কারণেই বহু পরিবারের ক্ষেত্রে অধিকতর তদন্ত চালিয়েছিলেন তারা।  যদিও সরাসরি তাদের ভুল স্বীকার করেননি।

এ সংক্রান্ত একটি সংসদীয় প্রতিবেদনে বলা হয়, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই সহায়তার অর্থ ফিরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে এসব পরিবারের সঙ্গে ‘নজিরবিহীন অবিচার’ করা হয়েছে।  নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দিয়ে কর কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ আর বিচারক যে ভুল করেছেন তার ‘তুলনারহিত‘।

অবশ্য নেদারল্যান্ডসে মন্ত্রিসভার সবার পদত্যাগের নজির এটিই প্রথম নয়, এর আগে ১৯৯৫ সালে বসনিয়া যুদ্ধের সময় নেদারল্যান্ডসের শ্রেব্রেনিকা এলাকায় বসবাসরত মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত গণহত্যা প্রতিরোধ করতে না পারার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছিল দেশটির তৎকালীন মন্ত্রিসভা।

এফআর/ এসএমডব্লিউ