গড়ছে ৯ হাজার সদস্যের বাহিনী
সংঘাতের হুমকি আফগান প্রতিরোধ আন্দোলনের
আফগান সাবেক সরকারি বাহিনীর সদস্যরা সুরক্ষিত পাঞ্জশির উপত্যকায় একটি প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলছেন। এর মাধ্যমে সশস্ত্র ইসলামি গোষ্ঠী তালেবানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। তবে প্রয়োজনে তারা তালেবানের সঙ্গে আলোচনাও করতে চায় বলে এই প্রতিরোধ আন্দোলনের মুখপাত্র আলী মাইসাম নাজারি ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আকস্মিকভাবে কাবুলে ঢুকে সারা দেশের নিয়ন্ত্রণ তালেবান নেওয়ার পর হাজার হাজার মানুষ এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগ দিতে এবং তাদের জীবন চালিয়ে যাওয়ার জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পাঞ্জশিরে আসছেন।
বিজ্ঞাপন
আলী মাইসাম নাজারি বলেছেন, দেশের কিংবদন্তি মুজাহিদীন কমান্ডার আহমদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমদ মাসুদ ইতোমধ্যে তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রায় ৯ হাজার মানুষের একটি বাহিনী গঠন করেছেন। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলার দু’দিন আগে জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার হাতে গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছিলেন মুজাহিদীন কমান্ডার আহমদ শাহ মাসুদ।
প্রতিরোধ আন্দোলনের সদস্যদের প্রশিক্ষণের ছবি ধারণ করেছে এএফপি। এতে দেখা যায়, রাজধানী কাবুলের উত্তরের পাঞ্জশির উপত্যকায় কয়েক ডজন সদস্য শরীর চর্চা করছেন এবং সাঁজোয়া যান চালাচ্ছেন।
দ্য ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (এনআরএফ) নামের এই আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য আফগানিস্তানে রক্তপাত এড়ানো এবং নতুন ধরনের সরকার ব্যবস্থার জন্য চাপপ্রয়োগ করা। কিন্তু নাজারি বলেছেন, দ্য ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট সংঘাতের জন্যও প্রস্তুত আছে। তালেবান যদি আলোচনা না করে, তাহলে তারা দেশজুড়ে প্রতিরোধের মুখোমুখি হবে।
এনআরএফের পররাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক প্রধান নাজারি বলেন, তালেবানের সাথে শান্তি চুক্তির শর্ত হলো বিকেন্দ্রীকরণ। এটি এমন এক ব্যবস্থা যা সামাজিক ন্যায়বিচার, সমতা, অধিকার এবং সবার জন্য স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে। তালেবান যদি এসব শর্তে রাজি না হয়, তাহলে দীর্ঘমেয়াদী সংঘাত হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
নাজারি বলেন, আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের মধ্যে কিছুদিন আগে পর্যন্ত আলোচনা চলছিল।
তিনি বলেন, তালেবান দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল দখলে নিলেও কিছু কিছু জেলায় স্থানীয় মিলিশিয়ারা তাদের কঠোর শাসনকে ইতোমধ্যে প্রতিরোধ করতে শুরু করেছে এবং মাসুদের এনআরএফের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এনআরএফের এই মুখপাত্র বলেছেন, আহমদ মাসুদ এসব কাজের জন্য আদেশ দেননি। তারপরও তারা সবাই আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন।
‘তালেবানরা সংখ্যায় অনেক হলেও একই সময়ে সর্বত্র তারা উপস্থিতি থাকতে পারবে না। তাদের সম্পদ সীমিত। তালেবানের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন নেই।’
তিনি বলেছেন, তবে আমরুল্লাহ সালেহর প্রতি মাসুদের ভিন্ন মত ছিল। কিন্তু দেশের এই ভাইস-প্রেসিডেন্টও উপত্যকায় আশ্রয় নিয়েছেন এবং গত সপ্তাহে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
আমরুল্লাহ সালেহর পাকিস্তান-বিরোধী কঠোর অবস্থান নিয়ে মাসুদের সাথে বিরোধ ছিল। কিন্তু আফগানিস্তানের তালেবান-সমর্থক প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক চান মাসুদ। নাজারি বলেন, আমরুল্লাহ সালেহ বর্তমানে পাঞ্জশিরে আছেন। তিনি দেশেই থাকবেন এবং পালাবেন না।
‘সালেহ তালেবানবিরোধী এবং পাকিস্তানবিরোধীও। তার অর্থ এই নয় যে, তিনি এই আন্দোলনের অংশ। তিনি পাঞ্জশিরে আছেন এবং তিনি সম্মানিত মানুষ।
নাজারি বলেন, এই মুহূর্তে পাঞ্জশির এবং এর জনগণকে রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের লড়াই শুধুমাত্র প্রতিরক্ষার জন্য। যদি কোনও আগ্রাসন চালানো হয়, আমাদের ওপর কোনও হামলা হয়, তাহলে আমরা নিজেদের রক্ষা করবো।
নিরাপদ অঞ্চল
মাসুদের বাহিনীর পাশাপাশি পাঞ্জশিরে বর্তমানে পুরো আফগানিস্তানের বাস্ত্যুুচুত এক হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন; যারা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে উপত্যকায় এসেছেন বলে জানিয়েছেন নাজারি।
‘আমরা দেখছি যে, পাঞ্জশির সেই সব গোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ অঞ্চল হয়ে উঠেছে; যারা অন্য প্রদেশে হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন।’
তিনি বলেন, এই প্রদেশে বুদ্ধিজীবী, নারী ও মানবাধিকার কর্মী এবং রাজনীতিবিদদের ঢল দেখা গেছে; যারা তালেবানের হুমকি অনুভব করছেন।
বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা এক নিবন্ধে মাসুদ তালেবানবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনের কর্মীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অস্ত্র সহায়তার অনুরোধ জানিয়েছেন। এএফপিকে নাজারি বলেছেন, পাঞ্জশিরে সারা দেশ থেকে নতুন যারা আসছেন তাদের দেখাশোনা এবং খাদ্য সরবরাহের জন্য মানবিক ত্রাণ সহায়তাও জরুরি হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, পাঞ্জশিরে মাসুদের এবং দেশজুড়ে অন্যান্যদের প্রতিরোধ পরিবর্তন আনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর পাঞ্জশির বরাবরই আশার প্রদ্বীপ হয়ে উঠেছে।
এসএস