যে চ্যালেঞ্জের সামনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী
শনিবার (২১ আগস্ট) শপথ নেওয়ার পর রোববার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দফতরে প্রথম দিন কাটিয়েছেন ইসমাইল সাবরি ইয়াকোব। মালয়েশিয়ার রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলাই এখন তার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক পরিবর্তিত ধরন ডেল্টার প্রভাবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মতো মালয়েশিয়াতেও ব্যাপকহারে বাড়ছে এ রোগে প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার দেশটিতে করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার ৫৬৪ জন, যা ছিল মহামারি শুরুর পর থেকে মালয়েশিয়ায় একদিনে তৃতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড। তাছাড়া এই দিন দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ২২৩ জন।
গত প্রায় চার মাস ধরে মালয়েশিয়াতে করোনায় আক্রান্ত ও এ রোগে মৃত্যুহার ঊর্ধ্বমূখী আছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত বছর থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন আরোপ করা হয়েছিল, টিকাাদান কর্মসূচির গতিও বাড়ানো হয়েছিল; কিন্তু পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়নি, বরং দেশটির অর্থনীতিতে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা।
টানা লকডাউন ও জরুরি অবস্থার কারনে সংকটে পড়েন দেশটির নিম্নমধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষ। গত মাসে মালয়েশিয়ার অনেক দরিদ্র মানুষ সরকারের কাছে খাদ্য সহায়তা চেয়ে বাড়ির ছাদে সাদা পতাকা টাঙ্গিয়েছিল।
এছাড়া মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত মালয়েশিয়ার অর্থনীতি। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুাযায়ী, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্ধেকে নেমে এসেছে।
মহামারি মোকাবিলায় ব্যর্থতা ও অর্থনীতির ক্ষয়ক্ষতির দায় মূলত পড়ে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিনের ওপর এবং দেশজুড়ে তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়।
একই সময়ে তার দল মালয়েশিয়ান ইউনাইটেড ইনডিজেনসা পার্টির কয়েকজন আইন প্রণেতা সেই দল ত্যাগ করে মালয়েশিয়ার বৃহত্তম রাজনৈদিক দল ইউনাইটেড ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনে (ইউএমএনও) যোগ দেন। ক্ষমতাসীন জোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ শরিক ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনও তার ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়।
শেষ রক্ষা হিসেবে শুক্রবার (১৩ আগস্ট), এক পার্লামেন্ট অধিবেশনে মুহিউদ্দিন প্রস্তাব দেন- আগামী সেপ্টেম্বরে আস্থা ভোটে তাকে সমর্থন দেওয়া হলে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারে যেসব প্রতিশ্রুতি তিনি ইতপূর্বে দিয়েছিলেন, সেগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।
কিন্তু তার ওই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে প্রত্যাখ্যান করা হয়।
ফলে, করোনা মাহামরি মোকাবেলায় ব্যর্থতা, স্বেচ্ছাচারিতা, মহামারি পরিস্থিতিতে অর্থনীতি পুনর্গঠনে সঠিক নির্দেশনা দিতে না পারা এবং অযৌক্তিকভাবে রাজাকে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরামর্শ দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত মুহিদ্দিনের সামনে পদত্যাগ করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। ১৫ আগস্ট দেশের রাজার কাছে তিনি পদত্যাগপত্র পেশ করেন।
তারপর গত ২০ আগস্ট সাবেক সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকোবকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন মালয়েশিয়ার রাজা আল সুলতান আবদুল্লাহ আহমদ শাহ।
ইউএমএনও বরাবরই অভিযোগ করে আসছিল, আস্থাভোটে কারচুপির মাধ্যমে মুহিদ্দিন ইয়াসিন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ইসমাইল সাবরি ইয়াকোবের প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ায় জোট সরকারে অবস্থান আরও দৃঢ় হলো মালয়েশিয়ার বৃহত্তম দলটির।
এদিকে, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে মালয়েশিয়ার জনগণের ক্ষোভ এখনও কমেনি। মহামারি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতার জন্য দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে এখনও সরকারের তীব্র সমালোচনা করে যাচ্ছেন মালয়েশিয়ার জনগণ।
সুত্র : রয়টার্স
এসএমডব্লিউ