রোববার ভারতে পৌঁছান আফগানিস্তানের শিখ সাংসদ নরেন্দর সিং খালসা

ভারতের মাটিতে পা রেখেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন আফগানিস্তানের শিখ সাংসদ নরেন্দর সিং খালসা। কাঁদতে কাঁদতেই আফগান এই সাংসদের দাবি, যে আফগানিস্তানকে গত ২০ বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে উঠতে দেখেছি, মুহূর্তে তা ভেঙে ছারখার হয়ে গেল। আবার সেই শূন্যতেই চলে গেল আফগানিস্তান।

ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই জানিয়েছে, রোববার (২২ আগস্ট) আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে ১৬৮ জনকে নিয়ে ভারতে পৌঁছেছে ভারতীয় বিমান বাহিনীর সি-১৭ মডেলের একটি বিশেষ ফ্লাইট। এদিন ভারতে পৌঁছানো ব্যক্তিদের মধ্যে নরেন্দর সিং খালসা এক জন।

গাজিয়াবাদে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হিন্দোন সামরিক ঘাঁটিতে নেওয়া হয়। বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন নরেন্দর সিং খালসা। নরেন্দ্রকে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করতেই আবেগ ধরে রাখতে পারেননি।

নিজেকে একটু সামলে নিয়ে অশ্রুসজল চোখেই সেখানকার ভয়ানক পরিস্থিতি বর্ণনা করেন তিনি। তার ভাষায়, আমার কান্না আসছে... যে আফগানিস্তানকে গত ২০ বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে উঠতে দেখেছি, মুহূর্তে তা ভেঙে ছারখার হয়ে গেল। আবার সেই শূন্যতেই চলে গেল আফগানিস্তান। একই সঙ্গে দেশটিতে আটকে থাকা ভারতীয়দের উদ্ধারের জন্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন আফগানি এই সাংসদ।

তালেবান কাবুল দখল করার পর থেকেই আফগান শিখরা ভারত সরকারের কাছে তাদের দ্রুত উদ্ধার করার দাবি জানান। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংও দেশটির কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে শিখদের উদ্ধারের আবেদন জানান। রোববার ভারতে আসা ওই বিশেষ বিমানে মোট ২৪ জন শিখ রয়েছেন।

ভারতে পৌঁছানো আরেক শিখ বলেন, ‘বার বার বিমানবন্দরে ছুটে গিয়েছি। অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছিল। বিমানবন্দরে যাওয়ার সময় তালেবান যোদ্ধারা পথ আটকাত। জিজ্ঞাসা করতো কেন কাবুল ছাড়ছি। নিরাপদে আমাদের ফিরিয়ে আনার জন্য নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানাই।’

এদিকে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের প্রধান বিমানবন্দরের কাছে হুড়োহুড়ি ও বিশৃঙ্খলার কারণে ৭ জন নিহত হয়েছেন। তালেবান দেশটির শাসনক্ষমতা গ্রহণের পর সাধারণ আফগানদের মধ্যে সৃষ্ট আতঙ্কে দেশছাড়ার হিড়িকের মধ্যেই এই ঘটনা ঘটল।

রোববার (২২ আগস্ট) এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানায় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। নিহতদের সবাই বেসামরিক সাধারণ আফগান নাগরিক। অবশ্য রোববার এই বিবৃতি প্রকাশ করা হলেও কবে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, সেটি পরিষ্কার করা হয়নি।

সাতজন সাধারণ আফগান নাগিরকের নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে বিবিসি জানিয়েছে, বর্তমানে প্রায় সাড়ে চার হাজার মার্কিন সেনা কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি নিয়ন্ত্রণ করছে। এছাড়া আটকে পড়াদের ফিরিয়ে নেওয়ার ফ্লাইট চলাচল নিশ্চিত করতে বিমানবন্দরে প্রায় ৯০০ ব্রিটিশ সেনাও মোতায়েন রয়েছে।

তবে বিমানবন্দরের বাইরের সকল রাস্তা ও চেকপয়েন্টগুলোতে পাহারা দিচ্ছে তালেবান যোদ্ধারা। বিমানবন্দরে যাওয়ার সড়কও তাদের দখলে। যথাযথ ভ্রমণ নথিপত্র না থাকলে দেশ ছাড়তে ইচ্ছুক আফগান নাগরিকদেরকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে যেতে দিচ্ছে না তালেবান।

টিএম