কাঁটাতারের বেড়ায় ঘেরা দেওয়ালের অপরপাশ থেকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর এক সদস্যের আফগান শিশুকে তুলে নেওয়ার হৃদয়বিদারক একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। এতে দেখা যায়, কাবুলের বিমানবন্দরের দেওয়ালের পাশে হাজার হাজার আফগান দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। দেওয়ালের পাশে শত শত মানুষের ভিড় থেকে এক শিশুকে দু’হাতে ওপরে তুলে ধরেন আফগান এক নাগরিক। কাঁটাতারের দেওয়ালের ওপাশ থেকে মার্কিন এক সৈন্য শিশুটিকে তুলে নেন। শুক্রবার শিশুটিকে মার্কিন সৈন্যের তুলে নেওয়ার এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা অনেকের মনে নাড়া দেয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, শিশুটির পরনে তখনও ডায়াপার। বিমানবন্দরে প্রবেশের চেষ্টা করা শত শত মানুষের মাঝে থেকে একজন তাকে দু’হাতে শূন্যে তুলে ধরেন। এ সময় দেওয়ালের পাশে দাঁড়ানো মার্কিন এক সৈন্য শিশুটিকে নেন।

রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ সশস্ত্র কট্টর ইসলামি গোষ্ঠী তালেবানের হাতে চলে যাওয়ার পর বিমানবন্দরে দেশ ছাড়তে মরিয়া হাজার হাজার আফগানের চেষ্টার চিত্র তুলে ধরেছে শিশুটির এই ঘটনা। গত রোববার কাবুলের পতনের পর নিজ দেশের নাগরিক এবং মার্কিন সামরিক বাহিনীর পক্ষে কাজ করা আফগানদের যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে নিতে শুরু করে ওয়াশিংটন।

কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ প্রায় ৬ হাজার মার্কিন সৈন্যের হাতে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নাগরিক ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফিরিয়ে নেওয়ার কাজ যখন অব্যাহত রেখেছে, তখন শনিবারও কাবুলের রাস্তায় ভারী অস্ত্রে সজ্জিত তালেবানের সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। ফিরিয়ে নেওয়ার কাজে বাধা দেওয়া হলে তার কঠোর জবাবের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। 

পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, নৌ সেনাদের বলা হয়েছিল, অজ্ঞাত শিশুটি অসুস্থ এবং তাকে সহায়তার অনুরোধ করা হয়েছিল। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আপনি যে ভিডিওটির কথা বলছেন... শিশুটি অসুস্থ থাকায় তার বাবা-মা মেরিন সেনার কাছে চিকিৎসা সহায়তা চেয়েছিল।

পেন্টাগনের এই মুখপাত্র বলেন, যে কারণে মেরিন সেনারা দেওয়ালের পাশে গিয়ে শিশুটিকে তুলে নেন এবং বিমানবন্দরে নরওয়ের একটি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করেন। তারা শিশুটির চিকিৎসা করেন এবং সুস্থ হয়ে ওঠার পর তার বাবার কাছে ফেরত দেন।

‌‘এটি ছিল সহানুভূতিমূলক একটি কাজ। কারণ শিশুটির স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ ছিল।’

জন কিরবি বলেন, তিনি শিশুটির পরিবার অথবা তাদের সম্পর্কে জানেন না। এছাড়া তাদের অভিবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হয়েছে কি-না সেবিষয়েও তিনি কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত এক তালিকায় অভিবাসী হিসেবে যে আফগানদের নেওয়ার তথ্য প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন; সেই তালিকায় শিশুটির পরিবারও আছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিশুটিকে মেরিন সেনার তুলে নেওয়ার ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী শিশুটিকে সহায়তাকারী সৈন্যের কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছে।

একটি ছবিতে দেখা যায়, সামরিক বাহিনীর পোশাক ও অস্ত্রে সজ্জিত ওই সেনা শিশুটিকে তার কোলে নিয়ে আছেন। সদ্যোজাত শিশুর বাবার মতো করে তার দিকে তাকিয়ে হাসছেন। এ সময় তার সহকর্মী অন্য সৈন্যরা সতর্ক অবস্থায় আছেন।

অন্য একটি ছবিতে দেখা যায়, মার্কিন সামরিক বাহিনীর দুই নারী সদস্য শিশুটিকে কোলে নিয়েছেন। অন্য একটি ছবিতে দেখা যায়, আফগান অপর এক শিশুকে মার্কিন সৈন্যরা পানি দিচ্ছেন।

সূত্র: এএফপি।

এসএস