বর্তমানে কাবুলের যে পরিস্থিতি, তাতে সেখান থেকে মার্কিন নাগরিক ফিরিয়ে আনার মতো কঠিন কাজ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এর আগে কখনও দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শুক্রবার হোয়াইট হাউজে দেওয়া ভাষণে এই মন্তব্য করেন তিনি।

ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটি (কাবুল থেকে মার্কিন নাগরিকদের সরিয়ে আনা) যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এবং কঠিন অপসারণ কাজ। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে-সে বিষয়ে এখন আমি কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে পারছি না।’

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, তালেবান বাহিনী কাবুল দখলের পর গত এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে কাবুল থেকে প্রায় ১৩ হাজার মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসা হয়েছে।

শুক্রবারের ভাষণে জো বাইডেন অবশ্য স্বীকার করেছেন, আফগানিস্তানে এখন পর্যন্ত কতজন মার্কিন নাগরিক রয়ে গেছেন সে বিষয়ক কোনো তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের হাতে নেই।

তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, দেশে ফিরতে ইচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রের সব নাগরিককে ফিরিয়ে আনতে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।

‘একটি ব্যাপারে আমি একদম পরিষ্কার এবং স্পষ্ট- যে কোনো মার্কিন নাগরিক যদি দেশে ফিরতে চান, আমরা তাকে বা তাদের ফিরিয়ে আনব।’

পাশাপাশি আফগানিস্তানে তালেবান বাহিনীর হাত থেকে দেশটিতে বসবাসরত নাগরিক ও বিদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেখানে মার্কিন সেনা উপস্থিতির মেয়াদ আরও বাড়ানোর যে দাবি বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির আইন প্রণেতারা তুলেছিলেন, তাতেও শুক্রবারের ভাষণে কার্যত জল ঢেলে দেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি- আফগানিস্তানে বর্তমানে অবস্থানরত মার্কিন সেনা সদস্যরা কোনোভাবেই বিমানবন্দর ও তার আশপাশের এলাকার বাইরে যাবে না। তাদেরকে সে রকমই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

২০০১ সাল থেকে ২০২০ সাল- প্রায় ২০ বছর প্রচুর অর্থ, সময়, শ্রম দিয়ে আফগানিস্তানের সেনা বাহিনী গড়ে তুলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু গত আড়াই মাসে তালেবান বাহিনীর সামনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন আফগান সেনা সদস্যরা। অনেক জায়গায় বিনাযুদ্ধে তালেবান বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন তারা।

এ নিয়ে বাইডেনের মনে কোনো খেদ আছে কি না – শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে বাইডেন বলেন, ‘না, আমার কোনো খেদ নেই। তাদের সক্ষমতা নিয়েও আমার কোনো প্রশ্ন নেই।’

এদিকে, আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে বেশ প্রভাব ফেলেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি জরিপ সংস্থা।

সাম্প্রতিক বিভিন্ন জরিপের ফলাফল বলছে, চলতি বছর এপ্রিলে যখন বাইডেন আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন, বেশিরভাগ মার্কিন নাগরিক সমর্থন দিয়েছিলেন সেই প্রস্তাবে। বাইডেনের জনপ্রিয়তাও বেড়ে গিয়েছিল তখন।

কিন্তু চলতি সপ্তাহে কাবুলের দখল তালেবানের হাতে চলে যাওয়া এবং কাবুল বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেনের জনপ্রিয়তা কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ।

শুক্রবার হোয়াইট হাউসে বক্তব্য দেওয়ার সময় বাইডেনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।

সূত্র : এএফপি

এসএমডব্লিউ