১৯৯০ এর দশকে তালেবানের শাসনামলে আফগানিস্তানে ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে পাথর নিক্ষেপসহ শহরের প্রাণকেন্দ্র অথবা স্টেডিয়ামে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো। দেশটির ক্ষমতায় সশস্ত্র এই গোষ্ঠী আবারও ফিরে আসায় সেই সময়ের কঠোর বিধি-নিষেধের পাশাপাশি নারীদের সামনে কী অপেক্ষা করছে তা এখনও পুরোপুরি পরিষ্কার নয়।

যদিও আফগানিস্তান দখলে নেওয়ার পর মঙ্গলবার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের সামনে তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ প্রকাশ্যে তালেবানের অতীত কিছু কট্টরপন্থী অবস্থান থেকে সরে এসে শান্তিপূর্ণভাবে দেশ শাসনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তালেবানের এই মুখপাত্র মার্কিন সমর্থিত বাহিনীর হয়ে যারা যুদ্ধ করেছিলেন তাদের সবাইকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি নারীদের অধিকারের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, তালেবান ইসলামের বিধি-বিধান অনুযায়ী নারীদের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

২০ বছর আগের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার সময়ের তালেবানের সঙ্গে বর্তমান তালেবানের ফারাক কি; সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি আদর্শ এবং বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে প্রশ্নটি করা হয়, তাহলে কোনও পার্থক্য নেই... কিন্তু যদি আমরা এটিকে অভিজ্ঞতা, পরিপক্কতা এবং অন্তর্দৃষ্টির ভিত্তিতে বিবেচনা করি, তাহলে এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, অনেক পার্থক্য আছে।

তিনি বলেন, ‘আজকের পদক্ষেপগুলো অতীতের তুলনায় ইতিবাচকভাবে ভিন্ন ধরনের হবে।’

তালেবানের শাসনামলে মেয়েদের স্কুল শিক্ষা নিষিদ্ধ করা হতে পারে বলে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, আপাতত সেই শঙ্কার মেঘ কিছুটা কেটে গেছে। সরকারি বাহিনী এবং স্থানীয় মিলিশিয়াদের পতনের পর দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাতের দখল তালেবানের হাতে চলে যাওয়ার পর চলতি সপ্তাহে এএফপির একজন আলোকচিত্রী ছাত্রীদের স্কুলে ফেরার ছবি ক্যামেরায় ধারণ করেন। 

রোকিয়া নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‌‘আমরা অন্যান্য দেশের মতো অগ্রগতি চাই। আর তালেবান নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে আমরা আশা করছি। আমরা যুদ্ধ চাই না, দেশে শান্তি চাই।’

ইরান সীমান্তের কাছের হেরাতের প্রাচীন সিল্ক রোড এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানের অন্যান্য অধিক রক্ষণশীল অঞ্চলের তুলনায় ব্যতিক্রম। এই এলাকার নারী এবং তরুণীরা রাস্তায় অবাধে হাঁটতেন। কবিতা ও শিল্পকলার জন্য বিখ্যাত এই শহরের স্কুল-কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রচুর উপস্থিতি দেখা যেতো। তবে শহরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা এখনও অনিশ্চিত।

৯০ এর দশকে আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণের সময় তালেবানরা যে শরিয়া আইনের কঠোর প্রয়োগ করেছিল, তাতে নারী এবং মেয়েদের বেশিরভাগই শিক্ষা এবং চাকরি থেকে বঞ্চিত ছিলেন। আপাদমস্তক ঢেকে জনসম্মুখে আসা নারীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয় এবং পুরুষ সঙ্গী ছাড়া কোনও নারী ঘর থেকে বের হতে পারতেন না।

সংবাদ সম্মেলনে জাবিহুল্লাহ বলেন, অন্যান্য দেশে বিভিন্ন পন্থা, নিয়ম-কানুন আছে। অন্যদের মতো আমাদেরও (আফগানদের) মূল্যবোধ অনুযায়ী নিজস্ব নিয়ম-কানুন থাকার অধিকার রয়েছে। আমরা শরিয়া আইনের অধীনে নারীদের অধিকারের প্রতি সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ। 

নারী অধিকার প্রসঙ্গে তালেবানের নীতি সম্পর্কে তিনি বলেন,  নারীরা আমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে যাচ্ছে। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করতে চাই যে, নারী-পুরুষে কোনো বৈষম্য থাকবে না। তালেবানের সরকারে নারীদের যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছে সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক কমিশনের সদস্য ইনামুল্লাহ সামানগানি। 

তিনি বলেছেন, শরিয়া আইন অনুযায়ী সরকারে নারীদের উপস্থিতি থাকা উচিত। এখনও সরকারের কাঠামো পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তবে পুরোপুরি ইসলামিক নেতৃত্ব থাকবে। এতে সব পক্ষেরই যোগ দেওয়া উচিত।

মঙ্গলবার প্রথমবার সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ। কর্মক্ষেত্রে নারীদের অধিকার কী হবে, সে বিষয়ে এসময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয়। জাবিউল্লাহ বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে তিনি বারবারই বলার চেষ্টা করেছেন ইসলামিক আইনের আওতায় থেকে নারীরা কাজ করতে পারবেন।

এদিকে, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তালেবানের আরেক মুখপাত্র সুহাইল শাহিন বলেছেন, নারীরা প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষাগ্রহণ করতে পারবেন। অর্থাৎ তারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়াশোনার অনুমতি পাবেন। সুহাইল শাহিন বলেছেন, তালেবানের দখলে থাকা এলাকায় হাজার হাজার স্কুল এখনও চালু আছে।

হেরাতের স্কুলের অধ্যক্ষ বাসিরা বাসিরাতখা সতর্ক আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, স্কুল পুনরায় খুলতে পারায় তিনি সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ। নারী এই অধ্যক্ষ বলেন, আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীদের অনেকেই ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী হিজাব পরে ক্লাসে উপস্থিত হচ্ছে। পরীক্ষা চলছে।

এসএস