আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখলের পর তালেবানের ভবিষ্যৎ সরকার কাঠামো নিয়ে কাতারের রাজধানী দোহায় আলোচনা চলছে। আলোচনা শেষে শিগগিরই এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে তালেবান।

তালেবানের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা আফগান সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজকে বলেছেন, তাদের নেতৃত্ব দোহায় আলোচনায় ব্যস্ত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং আফগানিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তালেবান যোগাযোগ করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তালেবানের রাজনৈতিক শাখার উপ-প্রধান মোল্লাহ আব্দুল গনি বারাদার বলেছেন, ‘এখন এই মুহূর্তটি তালেবানের জন্য একটা পরীক্ষা। এই সময়ে আমরা একটি পরীক্ষার মুখোমুখি হচ্ছি। কারণ এখন দেশের জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের কাঁধে।’

কাবুলের বাসিন্দা আহমদ ফরিদ বলেন, ‘এমন এক সরকার হওয়া উচিত যেখানে সবার অংশগ্রহণ থাকবে। সেখানে স্থিতিশীলতা থাকতে হবে। কাবুলের আরেক বাসিন্দা ফজল রাবি তোলো নিউজকে বলেন, ‘দেশব্যাপী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ মানুষ যুদ্ধে যুদ্ধে ক্লান্ত।’

এদিকে আফগানিস্তানের কমিউনিস্ট সরকার ও তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য পরিচিত হিজব-ই-ইসলামির নেতা গুলবুদ্দীন হেকমাতিয়ার বলেছেন, আশরাফ গনির ব্যর্থতা দেশকে আজ এমন একটি পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিতে গঠিত একটি স্বঘোষিত পরিষদের সদস্য হেকমাতিয়ার রোববার সন্ধ্যায় আগে রেকর্ড করা একটি বার্তায় বলেন, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের মধ্যে সহিংসতা বন্ধ ও আফগানিস্তানের সংকট শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করার কোনো প্রস্তুতি দেখা যায়নি।’

আফগানিস্তানের ন্যাশনাল সলিডারিটি পার্টির প্রধান আফগান রাজনীতিবিদ সৈয়দ ইসহাক গাইলানি বলেছেন, ‘আফগানিস্তানে এমন একটি সরকার ব্যবস্থা কার্যকর করা উচিত; যারা গত দুই দশকের অর্জনগুলো সংরক্ষণ করবে।’ 

রোববার তালেবান কাবুল দখলের পর দেশত্যাগকারী প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি সম্পর্কে সৈয়দ গাইলানি বলেন, ‘আশরাফ গনি রাষ্ট্রদ্রোহ করেছেন এবং তিনি দেশত্যাগ করেছেন। এখন তাদের (তালেবান) দ্রুত সরকার গঠন করা উচিত। অন্যথায়, মানুষ উদ্বেগের মধ্যে থাকবে।’

সশস্ত্রগোষ্ঠী তালেবান মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে গোটা আফগানিস্তান দখল করেছে। রোববার তারা কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই দেশটির রাজধানী কাবুলে ঢুকে পড়ে। এর মধ্য দিয়ে মার্কিন সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহারে ৩১ আগস্টের সময়সীমার দুই সপ্তাহেরও আগে তালেবান দেশ দখল করে নিল।

তালেবানের অভিযানের মুখে রোববার মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সদস্য ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি সেনারা তাদের নিজ নিজ দূতাবাসের কর্মী ও নাগরিকদের সরিয়ে নিতে ব্যস্ত রয়েছে।

সোমবার সকালের দিকে কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার অপেক্ষায় থাকা একটি সামরিক হেলিকপ্টারে হুড়োহুড়ি করে উঠতে গিয়ে অন্তত পাঁচ আফগানের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া বিমানের চাকায় চড়ে দেশ ছাড়ার চেষ্টার সময় অন্তত তিন আফগানকে চলন্ত বিমান থেকে পড়ে যেতে দেখা গেছে

এএস/জেএস