মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে দেশটির অন্তবর্তী সরকারের প্রধান হয়েছেন মুহিদ্দিন ইয়াসিন। দেশটির সংবাদ মাধ্যমসমূহের বরাত দিয়ে করা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার পর মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মালয়েশিয়ার রাজা আল সুলতান আব্দুল্লাহর কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করেন মুহিদ্দিন। তার এই পদত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশটির মন্ত্রিসভারও পতন ঘটল।

রাজা তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন এবং আগামী নির্বাচন হওয়ার আগ পর্যন্ত মালয়েশিয়ার অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে তাকে দায়িত্ব পালনের প্রস্তাব দিলে তা গ্রহণ করেন মুহিদ্দিন ইয়াসিন।

মালয়েশিয়ার রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তি বর্তমানে চরম পর্যায়ে রয়েছে এবং নির্বাচনের আগ পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে অপেক্ষাকৃত যোগ্য কোনো বিকল্প না থাকায় তাকে নিয়োগ দিয়েছেন রাজা।

এদিকে সোমবার বেলা ৩ টার দিকে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেলে ভাষণ দিয়েছেন মুহিদ্দিন ইয়াসিন। সেই ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমি চাইলে অসদুপায় অবলম্বন করে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদ ধরে রাখতে পারতাম; কিন্তু এভাবে আমি ক্ষমতায় থাকতে চাইনি। যতদিন প্রধানমন্ত্রীর পদে ছিলাম, কোনো দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হইনি, দেশের স্বাধীনতা ও বিচার ব্যবস্থাবিরোধী কোনো কাজে যুক্ত থাকিনি।’

‘যেসব অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে এসেছে…মহামারির কারণে গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। মালয়েশিয়াও তার বাইরে নয়।’

‘আমি আশা করব, আগামীতে নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠন হবে, সেটি মালয়েশিয়াকে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় নেতৃত্বদানে সক্ষম হবে।’

২০২০ সালে মালয়েশিয়ার পার্লামেন্ট দেওয়ান রাকাইয়েতের সদস্যদের ভোটে জিতে দেশটির ক্ষমতাসীন জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হয়েছিলেন মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক দল মালয়েশিয়ান ইউনাইটেড ইনডিজেনাস পার্টির (এমইউআইপি) নেতা মুহিদ্দিন ইয়াসিন। তবে তার পক্ষে ও বিপক্ষে পড়া ভোটের ব্যাবধান ছিল একদমই অল্প।

ফলে, নিজের পদ ধরে রাখার ব্যাপারে সারাক্ষণ চাপে ছিলেন তিনি। সম্প্রতি সেই চাপ আরও বেড়ে যায় তার দলের কয়েকজন আইন প্রণেতা বর্তমান ক্ষমতাসীন জোট সরকারের অন্যতম শরিক ও মালয়েশিয়ার বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনে (ইউএমএনও) যোগ দেওয়ার পর।

এছাড়া, করোনা মাহামরি মোকাবেলায় ব্যর্থতা, স্বেচ্ছাচারিতা, মহামারি পরিস্থিতিতে অর্থনীতি পুনর্গঠনে সঠিক নির্দেশনা দিতে না পারা এবং অযৌক্তিকভাবে রাজাকে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরামর্শ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মুহিদ্দিন ইয়াসিনের বিরুদ্ধে।

জুলাইয়ের শেষ তার পদত্যাগের দাবিতে মালয়েশিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয়, এর জেরে গত ৪ আগস্ট এক টেলিভিশন ভাষণে মুহিদ্দিন ইয়াসিন ঘোষণা করেন, পার্লামেন্টের সদস্যরা তাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে প্রস্তুত কিনা, যাচাই করতে আগামী সেপ্টেম্বরে দেওয়ান রাকাইতে আস্থা ভোট চান তিনি।

সেই ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘সম্প্রতি আমার প্রধানমন্ত্রীত্বের পদ নিয়ে কিছু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এবং এ সম্পর্কে আমি সচেতন। এ কারণে আমি মহামান্য রাজাকে বলেছি- উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দেশের সংবিধান ও আইনি প্রক্রিয়া মেনে দেওয়ান রাকইয়াতে আস্থা ভোট হওয়া প্রয়োজন।’

‘আগামী সেপ্টেম্বরে পার্লামেন্ট সেশন শুরু হলে এই আস্থা ভোটের আয়োজন হবে। এটি আমার রাজনৈতিক জীবনের একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং আমি তা গ্রহণ করছি। কারণ, দেওয়ান রাকইয়াতের অধিকাংশ আইনপ্রণেতা আমার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।’

কিন্তু শুক্রবার (১৩ আগস্ট), এক পার্লামেন্ট অধিবেশনে মুহিদ্দিন প্রথমবারের মতো স্বীকার করেন, তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। পাশাপাশি, আইন প্রণেতাদের তিনি প্রস্তাব দেন- আগামী সেপ্টেম্বরে আস্থা ভোটে তাকে সমর্থন দেওয়া হলে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারে যেসব প্রতিশ্রুতি তিনি ইতপূর্বে দিয়েছিলেন, সেগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।

তার ওই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে প্রত্যাখ্যান করা হয়।

সূত্র : রয়টার্স, স্টার অনলাইন

এসএমডব্লিউ