তালেবানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে চায় চীন
সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠী তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ার পর চীন বলেছে, তারা তালেবানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক আরও গভীর করতে প্রস্তুত। সোমবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তালেবানের সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্কের বিষয়ে এই মন্তব্য করেছেন।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং বলেছেন, স্বাধীনভাবে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণে আফগান জনগণের অধিকারকে সম্মান জানায় চীন। তারা আফগানিস্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে ইচ্ছুক।
বিজ্ঞাপন
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের সময় থেকেই তালেবানদের সাথে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করছে বেইজিং। যা দেশজুড়ে কট্টরপন্থী এই বিদ্রোহীগোষ্ঠীর অগ্রযাত্রা উৎসাহিত করেছে।
দেশজুড়ে একের পর এক প্রাদেশিক শহর দখলের পর রোববার রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করেছে তালেবান। তালেবানের আগ্রাসী অভিযানের মুখে দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সদস্যসহ দেশ ছেড়ে তাজিকিস্তানে গেছেন। সেখান থেকে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে গনি বলেছেন, রক্তপাত এড়াতে তিনি দেশ ছেড়েছেন।
চীনের সঙ্গে আফগানিস্তানের ৭৬ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। বেইজিং দীর্ঘদিন ধরে আশঙ্কা করে আসছে যে, জিনজিয়াংয়ের সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে আফগানিস্তান।
কিন্তু গত ২৮ জুলাই চীনের উত্তরাঞ্চলীয় শহর তিয়ানজিনে তালেবানের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। ইসলামপন্থি এই গোষ্ঠী শক্তিশালী হিসেবে হাজির হওয়ায় ওয়াং ই বলেছেন, আফগানিস্তান একটি মধ্যপন্থি ইসলামি নীতি গ্রহণ করবে বলে তিনি আশা করেন।
সেই সময় তালেবানের প্রতিনিধিরা চীনকে আশ্বস্ত করে জানায়, আফগানিস্তানকে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। জবাবে, যুদ্ধ-পরবর্তী আফগানিস্তান পুনর্গঠনে অর্থনৈতিক সহায়তা এবং বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয় চীন।
সোমবার চীন বলেছে, তারা আফগানিস্তানের সাথে সম্পর্ক গভীর করার সুযোগকে স্বাগত জানায়; যে দেশটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শক্তিধর দেশগুলোর কাছে তার ভূ-কৌশলগত গুরুত্বের জন্য আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিল। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং বলেছেন, তালেবানরা বারবার চীনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার আশা প্রকাশ করেছে। আফগানিস্তানের পুনর্গঠন এবং উন্নয়নে চীনের অংশগ্রহণের অপেক্ষায় আছে তালেবান।
তিনি বলেন, আমরা এটাকে স্বাগত জানাই। চীন আফগান জনগণের ভাগ্য নির্ধারণের অধিকারকে সম্মান করে এবং আফগানিস্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে ইচ্ছুক।
শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর এবং উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠার আলোচনার প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং আফগান ও বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তালেবানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হুয়া চুনইং।
তিনি বলেছেন, কাবুলে চীনের দূতাবাস এখন চালু আছে। যদিও আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে কয়েক মাস আগে থেকেই নাগরিকদের দেশে ফেরাতে শুরু করে চীন।
সোমবার এক বিবৃতিতে কাবুলে নিযুক্ত চীনা দূতাবাস আফগানিস্তানে অবস্থানরত নিজ নাগরিকদের নিরাপত্তা পরিস্থিতির প্রতি গভীর মনযোগ দিতে এবং ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আফগান যুদ্ধের দুই দশক পূর্তির দিন আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সৈন্য প্রত্যাহার শেষ হওয়ার আগেই তালেবানের ঝটিকা অভিযানের মুখে আফগান সরকারের পতনে হতবাক হয়েছে ওয়াশিংটন।
রোববার কাবুলে প্রবেশের পর তালেবান বিশ্ব সম্প্রদায়কে আফগানরা কারও জন্য হুমকি হবে না বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত জোটের প্রতি যারা সমর্থন জানিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের প্রতিশোধ নেওয়া হবে না।
সূত্র: এএফপি।
এসএস