তুরস্কের কৃষ্ণসাগর উপকূলীয় এলাকায় দেশটিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় প্রাণহানি বেড়ে অন্তত ৪৪ জনে দাঁড়িয়েছে। চলতি আগস্টে দাবানলের পর দ্বিতীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর দেশটির জরুরি সেবা কর্মীরা উদ্ধার তৎপরতা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। 

রয়টার্স লিখেছে, উত্তরাঞ্চলে শুরু হওয়ায় সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে ভয়াবহ এ বন্যার পর নিখোঁজদের পরিবারগুলো উদ্বিগ্নভাবে উদ্ধারকর্মীদের ভবনে ভবনে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে দেখছেন। ঝোড়ো বৃষ্টিতে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেই শঙ্কা।

রয়টার্সের হাতে আসা ড্রোন থেকে করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ভয়াবহ এ বন্যায় কৃষ্ণসাগর উপকূলের শহর বোজকার্ট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধবে পড়া ভবনের ভেতর থেকে জীবিতদের উদ্ধারে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে জরুরি সেবা বিভাগের কর্মীরা।    

তুরস্কের জাতীয় বিপর্যয় ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা বিষয়ক দফতর (এএফএডি) জানিয়েছে, বন্যায় বোজকার্ট শহরসহ কাসতামোনু জেলাতেই ৩৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এছাড়া বন্যায় সিনোপ ও বার্তিনে যথাক্রমে সাত জন এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে।   

সোলেন নামের একটি নদীর তীরে ধসে পড়া একটি ভবনের নিচে আরও ১০ জন এখনো চাপা পড়ে রয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। বন্যার পানিতে আরও কিছু ভবনের ভেতর ঢুকে পড়েছে। নিখোঁজ স্বজনরা তাদের প্রিয়জনের খোঁজে দাঁড়িয়ে উদ্ধার তৎপরতা দেখছেন।

তেমনই একজন ৪২ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা ইলিয়াস কালাবালিক রয়টার্সকে বলেন, ‌‘এটা একেবারেই অনাকাঙিক্ষত। এখানে বিদ্যুৎ নেই। আমাদের মোবাইল ফোনগুলো অচল। কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। কারো কাছ থেকে কোনো খবর মিলছে না।’   

‘পানি আরও বাড়বে না কমবে, ভবনগুলো প্লাবিত হবে কিনা সে সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। আমরা শুধু অপেক্ষায় আছি। স্ত্রী ও সন্তানরা আতঙ্কিত। সকালে সূর্য উঠলে পুলিশ কর্মকর্তাদের দেখি। তারা আমাদের বের করে দিয়ে উদ্ধার চালায়। আমরা দেখি।’    

ইলিয়াস কালাবালিক আরও বলেন, ‘আমার খালার সন্তানরা সেখানে আছে। আমার খালা নিখোঁজ। তার স্বামী নিখোঁজ। তার যমজ নাতি -নাতনি নিখোঁজ। আমাদের বিল্ডিং ম্যানেজারের স্ত্রী ও তাদের দুই সন্তানসহ নিখোঁজ। কিন্তু কারো কোনো খোঁজ মিলছে না।’ 

বন্যায় তুরস্কের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে মানুষজন। সবচেয়ে বিপর্যস্ত ছোট শহর বোজকার্টের একটি গ্রামে তিন দিনের কম সময়ের মধ্যে আনুমানিক ৪৫ সেন্টিমিটার বা ১৮ ইঞ্চি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। 

মৌসুমী বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যার পানির স্রোতের নিচে ডজন ডজন গাড়ি তলিয়ে থাকতে দেখা গেছে। সড়ক প্লাবিত হয়ে যেন ধ্বংসস্তুপ পরিণত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে অনেক সেতু, রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে এবং বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে শত শত গ্রাম।

তুরস্কের দক্ষিণ উপকূলে গত দুই সপ্তাহ ধরে ছড়িয়ে পড়া দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেওয়ার মধ্যে এবার কৃষ্ণসাগর উপকূলে অবস্থিত উত্তরের প্রদেশগুলো বন্যার কবলে পড়ায় সেখানে নতুন করে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। 

এএস