তালেবানের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর লড়াই তীব্র আকার ধারণ করায় আফগানিস্তানের চতুর্থ বৃহত্তম শহর মাজার-ই-শরিফ থেকে নিজ নাগরিকদের দেশে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে ভারত। মঙ্গলবার একটি বিশেষ ফ্লাইটে করে ভারতীয় নাগরিকরা দেশে ফিরতে পারবেন বলে নয়াদিল্লি জানিয়েছে।

মাজার-ই-শরিফে নিযুক্ত ভারতীয় কনস্যুলেটের এক টুইট বার্তায় বলা হয়েছে, নয়াদিল্লির উদ্দেশে আজ একটি বিশেষ ফ্লাইট মাজার-ই-শরিফ ত্যাগ করবে। মাজার-ই-শরিফ এবং এর আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিকদের আজ সন্ধ্যায় বিশেষ ফ্লাইটে ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরুর অনুরোধ করা হচ্ছে।

যে ভারতীয় নাগরিকরা বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে করে দেশে ফিরতে চান, তাদেরকে মাজার-ই-শরিফে ভারতীয় কনস্যুলেটে নিজের বিস্তারিত তথ্য, পুরো নাম এবং পাসপোর্ট নম্বর অবিলম্বে জমা দেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে। নয়াদিল্লির তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানে বর্তমানে প্রায় দেড় হাজার ভারতীয় নাগরিক অবস্থান করছেন।

এর আগে, গত মাসে কান্দাহারে আফগান বাহিনী এবং তালেবান যোদ্ধাদের তীব্র লড়াই শুরু হওয়ায় সেখানকার কনস্যুলেট থেকে প্রায় ৫০ জন কূটনীতিক এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে ফিরিয়ে নেয় ভারত। সোমবার তালেবান বলেছে, তারা এখন মাজার-ই-শরিফ দখলের দিকে নজর দিয়েছে।

বিদ্রোহী এই গোষ্ঠীর একজন মুখপাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় বলেছেন, তারা মাজার-ই-শরিফের চারপাশেই আক্রমণ শুরু করেছে। তারা ইতোমধ্যে এই শহরের পশ্চিমের শেবারঘান এবং কুন্দুজ ও পূর্বের তালোকান শহরের দখল নিয়েছে।

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ শহর মাজার-ই-শরিফ। ওই অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই শহরটিকে অন্যতম প্রবেশদ্বার হিসেবে মনে করা হয়।

এদিকে, গত এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের ষষ্ঠ প্রাদেশিক রাজধানীর দখল নিয়েছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান। সোমবার দেশটির উত্তরাঞ্চলের সামানগান প্রদেশের রাজধানী আইবাকের দখল তালেবানের হাতে চলে গেছে বলে সেখানকার ডেপুটি গভর্নর নিশ্চিত করেছেন। 

এর আগে রোববার পঞ্চম প্রদেশের রাজধানী হিসেবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় তাখারের তালোকান দখলে নেয় তালেবান। এর মাধ্যমে একদিনে তিনটি প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে আফগান সশস্ত্র এই গোষ্ঠী। রোববার দিনের প্রথম ভাগে তালেবান যোদ্ধাদের দখলে যায় দুই প্রাদেশিক রাজধানী কুন্দুজ এবং সার-ই-পুল।

তারও আগে, শুক্রবার দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ নিমরোজের রাজধানী জারাঞ্জ এবং শনিবার উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ জাওজানের রাজধানী শেবেরঘানের দখল নেয় তালেবান যোদ্ধারা। ২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে বিমান হামলা করেছিল মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়দা নেটওয়ার্ক। সে সময় এই গোষ্ঠীর প্রধান ঘাঁটি ছিল তালেবান শাসিত আফগানিস্তান।

টুইন টাওয়ারে হামলার জেরে ওই বছর আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে মার্কিন ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। অভিযানে পতন হয় তালেবান সরকারের। অভিযানের প্রায় ২০ বছর পর চলতি বছর এপ্রিলে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

তিনি বলেছিলেন, ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব মার্কিন ও ন্যাটো সেনাসদস্যকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। পরে এই সময়সীমাকে আরও এগিয়ে ৩১ আগস্ট করা হয়।

বাইডেনের এই ঘোষণার পর থেকেই নতুন উদ্যমে আফগানিস্তান পুনরায় নিজেদের দখলে নিয়ে আসার অভিযান শুরু করেছে কট্টরপন্থি ইসলামি গোষ্ঠী তালেবান। মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদর দফতর পেন্টাগনের তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানের ৪১৯টি জেলার অর্ধেকেরও বেশির দখল নিয়েছে তালেবান।

সূত্র: পিটিআই, রয়টার্স।

এসএস