দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া দাবানল মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য ক্ষমা চেয়ে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিটসোটাকিস বলেছেন, ‌‌‘মানুষ হিসেবে যা সম্ভব তার অনেক কিছুই হয়তো আমরা করেছি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট পদক্ষেপ নিতে পারিনি।’ 

ভয়াবহ দাবানলে গ্রিসের শত শত বাড়িঘর ও বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল পুড়ে ছাঁই হয়েছে। বাধ্য হয়ে বহু মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। অনেককে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে বিপুল সম্পত্তি। শত শত অগ্নিনির্বাপণকর্মী আগুন নেভানোর কাজ করছেন।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী এক সপ্তাহ ধরে চলা দাবানল নিয়ে টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভয়াবহ এই দাবানলে যাদের ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে তাদের কষ্ট আমরা বুঝি। অভূতপূর্ব এক দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা।’ 

প্রধানমন্ত্রী মিটসোটাকিস বলেন, দাবানল মোকাবিলায় কোনো ব্যর্থতা থাকলে তা চিহ্নিত করা হবে। তবে তিনি জোর দিয়ে আরও বলেন, অগ্নিনির্বাপক বাহিনী ‘অতিপ্রাকৃত এই শক্তির সাথে লড়াই করে যাচ্ছেন। যদিও দাবানলের শক্তি তাদের শক্তির চেয়ে অনেক বেশি।’

তিনি দাবানল এর জন্য জলবায়ু সংকটকে দায়ী করেন যার কারণে ‘কয়েক সপ্তাহ ধরে চলমান দাবানলের’ সৃষ্টি। এর কয়েক ঘণ্টা আগে জাতিসংঘ একটি প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে, মানুষের কার্যকলাপ চরম আবহাওয়ার ঘটনাকে আরও স্বাভাবিক করে তুলছে।

মানুষের কর্মকাণ্ড পৃথিবীর জলবায়ুকে অল্প সময়েই যেভাবে বদলে দিয়েছে, তেমনটা লাখো বছরেও ঘটেনি। আর এই পরিবর্তন অনেক ক্ষেত্রে আর সংশোধনের উপায় নেই, যা মানবজাতিকে অনিবার্য পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। 

জাতিসংঘের গঠিত জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) প্রতিবেদন বলছে, পৃথিবীর উষ্ণতা যেভাবে বাড়ছে তাতে চূড়ান্ত বিপদের খুব কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে মানবসভ্যতা। আর সেজন্য মানুষই পুরোপুরি দায়ী। এ জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

গ্রিসে কয়েক দশকের রেকর্ড সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও প্রবল বাতাসে গত জুলাইয়ের শেষ থেকে দেশটিতে মোট ৫৮০টি স্থানে এমন দাবানল দেখা দিয়েছে। দেশটির এভিয়া দ্বীপের পাইনগাছের জঙ্গলের একটা বড় অংশে আগুন জ্বলছে। সরানো হচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের।

সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে শত শত অগ্নিনির্বাপণকর্মী। জনপ্রিয় এই পর্যটন দ্বীপে আগুন নেভাতে অগ্নিনির্বাপণকর্মী আর স্থানীয় লোকজনকে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করতে দেখা গেছে। এভিয়ার উত্তর অংশের দাবানলের আগুন সৈকতের গ্রামগুলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

এথেন্সের শহরতলীতেও দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিল। সেখানে এখন এর ক্ষিপ্রতা কমেছে। তবে এথেন্সের উত্তরের এভিয়া দ্বীপে দাবানল চলছে। চারপাশে ছড়িয়ে পড়া এই দাবানলে হাজার হাজার হেক্টর বনাঞ্চল পুড়ে ছাঁই হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

দ্বীপটির অনেক গ্রামের মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সারোপৌলি নামক গ্রামের বাসিন্দা এএফপিকে বলেন, ‘আমাদের গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি বাড়ি হারিয়েছি। কিছুই অবশিষ্ট নেই। কাল কি হবে জানি না। এটা বিশাল বিপর্যয়।’

সপ্তাহব্যাপী দাবদাহের পর গ্রিসের বিভিন্ন অংশে তিন দশকে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। রেকর্ড তাপমাত্রায় দাবদাহ হয়েছে প্রলয়ঙ্কারী। বনভুমি ‍পুড়ে ছাঁই হয়েছে। দাবানলে ছারখার হয়েছে অনেক বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।   

দেশজুড়ে দাবানল ঠেকাতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, মিসরের মতো দেশ। স্পেন দাবানল ঠেকানোর জন্য বিমান পাঠিয়েছে। মোতায়েন রয়েছে সাড়ে পাঁচ শতাধিক দমকলকর্মী।  

সেন্ট্রাল গ্রিসের গভর্নর ফেনিস স্পানোস বলেছেন, দ্বীপটির পরিস্থিতি এক সপ্তাহ ধরে ‌‘খুবই জটিল’। দাবানলের শক্তি দিন দিন বাড়ছে। বিস্তীর্ণ এলাকা পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে। হোটেল ও আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে দুই হাজারের বেশি মানুষকে।

এএস