দীর্ঘ দুই যুগের অভিযান শেষে বহুজাতিক সেনারা আফগানিস্তান ছাড়ার মধ্যে বিদ্রোহীগোষ্ঠী তালেবানের হাতে একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানীর পতনের পর আফগানিস্তানকে রক্ষা করা দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

তালেবান খুবই দ্রুতগতিতে আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকা দখল করে নিচ্ছে। গ্রামীণ এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এখন বড় বড় শহর ও বাণিজ্য কেন্দ্রগুলো দখল করছে তালেবান। দেশটিতে তৈরি বিরাট নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে ওয়াশিংটন এমন অবস্থান জানালো। 

গত এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা দিয়েছেন ৩১ আগস্টের মধ্যে মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ছাড়বে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত সমালোচনার মুখে পড়েছে। খোদ মার্কিন সমর্থিত আফগান প্রেসিডেন্টও যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। 

একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নেওয়াতে ওয়াশিংটন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন কিন্তু বিদ্রোহী এই গোষ্ঠীটির সঙ্গে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর লড়াই করার ক্ষমতা আছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি।

তিনি বলেছেন, ‘এরা তাদের সামরিক বাহিনী, এগুলো তাদের প্রাদেশিক রাজধানী আর তাই তাদের জনগণ রক্ষার দায়িত্ব তাদের নিতে হবে। তারা এই বিশেষ মুহূর্তে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে ইচ্ছুক কিনা সেটা তাদের নেতৃত্বের ওপরই নির্ভর করছে।’

উভয়পক্ষ নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দখলে নিতে মরিয়া চেষ্টা চালানোয় দেশটির নিরাপত্তা ও মানুষজনের ভাগ্য নিয়ে ভীষণ উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আফগান নিরাপত্তা বাহিনী লড়াই চালিয়ে যেতে না পারলে যুক্তরাষ্ট্রের কি করার আছে প্রশ্নে কিরবি বলেন, ‘বেশি কিছু করার নেই।’ 

মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেছেন, সৈন্য প্রত্যাহার করে নিলে প্রাদেশিক রাজধানীগুলোর পতন হতে পারে বলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন সতর্ক করলেও সেটা যে এত তাড়াতাড়ি হতে পার তা দেখে এখন মার্কিন সামরিক বাহিনী বিস্মিত।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়য়ে বলেছিলেন, আফগানিস্তানের জনগণকেই তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রজন্মকে ২০ বছর ধরে চলা ওই যুদ্ধে ঠেলে দেবেন না বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র যে আফগানিস্তানে তাদের দুই দশকের যুদ্ধ আর বাড়াতে চায় না তাদের এসব কথাতে স্পষ্ট। ২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলা হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করলে তৎকালীন তালেবান সরকারের পতন ঘটেছিল।

তবে ক্ষমতাচ্যুত হলেও দীর্ঘ দুই দশক ধরে তালেবান মার্কিন, ন্যাটো কিংবা আফগান বাহিনীর কাছে নতিস্বীকার করেনি। গত দুই দশকে শান্তিও ফেরেনি দেশটিতে। বরাবর অস্থিতিশীলতার মধ্যে কাটিয়েছে। এ অবস্থার মধ্যেই নিজেদের আবার সংগঠিত করেছে তালেবান।

এএস