রেডিও ব্যবস্থাপককে হত্যা, সাংবাদিক অপহরণ করেছে তালেবান
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের এক রেডিও স্টেশনের ব্যবস্থাপককে হত্যা এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দ প্রদেশের এক সাংবাদিককে অপহরণ করা হয়েছে। দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালেবানের সন্দেহভাজন যোদ্ধারা এই হত্যাকাণ্ড এবং অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে সোমবার স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দেশটিতে গণমাধ্যম কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে তালেবানের টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, রোববার কাবুলের পাকতিয়া ঘাগ রেডিও স্টেশনের ব্যবস্থাপক তুফান ওমরকে পরিকল্পিতভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আফগানিস্তানের স্বাধীন গণমাধ্যমের সমর্থনকারী গোষ্ঠী এনএআইয়ের একজন কর্মকর্তা ছিলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
এনএআইয়ের প্রধান মুজিব খেলওয়াতগার বলেছেন, অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা ওমরকে হত্যা করেছেন...তিনি উদার মানুষ ছিলেন... স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য আমাদের লক্ষ্যে পরিণত করা হচ্ছে। কাবুলের কর্মকর্তারা এই হামলার জন্য তালেবানের যোদ্ধাদের সন্দেহ করছেন।
গত মাসে এনএআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরে আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো কমপক্ষে ৩০ সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকর্মীকে হত্যা, আহত অথবা অপহরণ করেছে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দ প্রদেশের কর্মকর্তারা বলেছেন, রোববার স্থানীয় সাংবাদিক নেমাতুল্লাহ হেমাতকে প্রাদেশিক রাজধানী লশকর গাহের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছে তালেবানের যোদ্ধারা। স্থানীয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ঘারঘাশত টিভিতেও কর্মরত ছিলেন তিনি। এই টেলিভিশনের প্রধান রাজওয়ান মিয়াখেল বলেছেন, হেমাতকে তালেবানের সদস্যরা কোথায় নিয়ে গেছে তার কোনও সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
তালেবানের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, কাবুলে হত্যাকাণ্ড অথবা হেলমান্দে অপহৃত সাংবাদিকের ব্যাপারে কোন তথ্য তার কাছে নেই।
আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম সংগঠনগুলোর একটি জোট মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং প্রতিনিধি পরিষদের নেতাদের কাছে লেখা এক চিঠিতে আফগান সাংবাদিক এবং কর্মচারীদের বিশেষ অভিবাসন ভিসা অনুমোদনের আহ্বান জানিয়েছে।
চলতি মাসেই মার্কিন এবং পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যদের আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা দেওয়ার পর তালেবানের দেশ দখলের লড়াই তীব্র হয়েছে। গত এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের অন্তত ছয়টি প্রাদেশিক রাজধানীর দখল নিয়েছে দেশটির সশস্ত্র এই গোষ্ঠী।
সোমবারও দেশটির উত্তরাঞ্চলের সামানগান প্রদেশের রাজধানী আইবাকের দখল তালেবানের হাতে চলে গেছে বলে সেখানকার ডেপুটি গভর্নর নিশ্চিত করেছেন।
প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর সেফাতুল্লাহ সামানগানি বলেছেন, সামানগানির রাজধানী এখন পুরোপুরি তালেবানের নিয়ন্ত্রণে। এর কিছুক্ষণ পর তালেবানের মুখপাত্র এক টুইট বার্তায় বলেন, সব সরকারি এবং পুলিশ স্থাপনা সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা হয়েছে। আফগানিস্তানে মোট ৩৪টি প্রদেশ রয়েছে; সোমবার পর্যন্ত সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর সদস্যরা ছয়টি প্রদেশের রাজধানীর দখল নিলো।
এর আগে রোববার পঞ্চম প্রদেশের রাজধানী হিসেবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় তাখারের তালোকান দখলে নেয় তালেবান। এর মাধ্যমে একদিনে তিনটি প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে আফগান সশস্ত্র এই গোষ্ঠী। রোববার দিনের প্রথম ভাগে তালেবান যোদ্ধাদের দখলে যায় দুই প্রাদেশিক রাজধানী কুন্দুজ এবং সার-ই-পুল।
তার আগে, শুক্রবার দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ নিমরোজের রাজধানী জারাঞ্জ এবং শনিবার উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ জাওজানের রাজধানী শেবেরঘানের দখল নেয় তালেবান যোদ্ধারা।
তালেবানের দখলে যাওয়া কুন্দুজ শহরের দখল ফিরে পেতে সোমবার আফগান সামরিক বাহিনী কমান্ডো অভিযান শুরু করেছে। তীব্র লড়াইয়ের মাঝে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা শহর ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যাচ্ছেন বলে খবর দিয়েছে রয়টার্স। তারা বলেছেন, কুন্দুজে অনবরত গোলাগুলি এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে বিমান হামলা করেছিল মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়দা নেটওয়ার্ক। সে সময় এই গোষ্ঠীর প্রধান ঘাঁটি ছিল তালেবান শাসিত আফগানিস্তান।
টুইন টাওয়ারে হামলার জেরে ওই বছর আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে মার্কিন ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। অভিযানে পতন হয় তালেবান সরকারের। অভিযানের প্রায় ২০ বছর পর চলতি বছর এপ্রিলে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তিনি বলেছিলেন, ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব মার্কিন ও ন্যাটো সেনাসদস্যকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। পরে এই সময়সীমাকে আরও এগিয়ে ৩১ আগস্ট করা হয়।
সূত্র: রয়টার্স, এএফপি।
এসএস