আফগানিস্তানে তালেবানগোষ্ঠীর সদ্য দখলে যাওয়া জাওজান প্রদেশের রাজধানী শেবেরঘানে মার্কিন ও আফগান সামরিক বাহিনীর যৌথ বিমান হামলায় ২ শতাধিক তালেবান সদস্য নিহত হয়েছেন। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ফাওয়াদ আমান শনিবার রাতে দু’টি টুইটে তথ্য জানিয়েছেন।

টু্ইটে আফগানিস্তান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জানান, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শেবেরঘানে বি-৫২ যুদ্ধ বিমান নিয়ে হামলা চালিয়েছে যৌথ বাহিনীর সেনাসদস্যরা। শহরটির আফগান ঘাঁটিসমূহ লক্ষ্য করে পরিচালিত এ হামলায় ২০০ তালেবান সদস্য নিহত হয়েছেন। এছাড়া বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ শতাধিক যুদ্ধযান এই অভিযানে ধ্বংস হয়েছে।

২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে বিমান হামলা করেছিল মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দা নেটওয়ার্ক। সে সময় এই গোষ্ঠীর প্রধান ঘাঁটি ছিল তালেবান শাসিত আফগানিস্তান।

টুইন টাওয়ারে হামলার জেরে ওই বছর আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে মার্কিন ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। অভিযানে পতন হয় তালেবান সরকারের।

অভিযানের প্রায় ২০ বছর পর চলতি বছর এপ্রিলে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ঘোষণায় তিনি বলেছিলেন, ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব মার্কিন ও ন্যাটো সেনাসদস্যকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। পরে এই সময়সীমাকে আরও এগিয়ে ৩১ আগস্ট করা হয়।

বাইডেনের এই ঘোষণার পর থেকেই নতুন উদ্যমে আফগানিস্তান পুনরায় নিজেদের দখলে নিয়ে আসার অভিযান শুরু করেছে কট্টরপন্থি ইসলামি গোষ্ঠী তালেবান। মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদর দফতর পেন্টাগনের তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানের ৪১৯টি জেলার অর্ধেকেরও বেশির দখল নিয়েছে তালেবান। তালেবান দখলকৃত এলাকাসমূহের মধ্যে ইরান ও পাকিস্তানের সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলোও আছে।

শুক্রবার আফগানিস্তানের নিমরোজ প্রদেশের রাজধানী জারাঞ্জ দখল করেছে তালেবান এবং তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ জাওজানের রাজধানী শেবেরঘানেরও তালেবানগোষ্ঠীর দখলে চলে যায়।

দখল অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আফগানিস্তানজুড়ে ব্যাপকভাবে হত্যা ও রক্তপাতও চালাচ্ছে তালেবানগোষ্ঠী। শুক্রবার আফগান সরকারের মিডিয়া ও তথ্য বিভাগের প্রধান দাওয়া খান মিনাপালকে হত্যা করেছে তালেবান সদস্যরা।

এদিকে, আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার ও তালেবানগোষ্ঠীর মধ্যে সমঝোতা স্থাপনের যে প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিকভাবে শুরু হয়েছিল, কট্টর সুন্নি ইসলামপন্থি দলটির সাম্প্রতিক অভিযান, সংঘাত ও রক্তপাতের কারণে তা কার্যত থমকে গেছে।

শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে সদস্য রাষ্ট্রসমূহ। বৈঠকে উপস্থিত স্থায়ী ও অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা রাজনৈতিক সমঝোতায় আসতে তালেবানগোষ্ঠীকে আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে, তালেবান বাহিনীর অভিযানের জেরে আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়ছে দেশটিতে। নানগারহার প্রদেশের ইসলামী নেতারা আহত আফগান সামরিক বাহিনীর সদস্যদের রক্ত দান করেছেন।

দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী ও স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমসমূহ জানিয়েছে, আফগান সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নানগারহার, লোগার, গজনি , পাখতিয়া, মাইদান ওয়ার্দাক, কান্দাহার, হেরাত, ফারাহ, জাওজান, সামানগান, হেলমান্দ, তাখার, বেঘলান ও কাপসিয়ায় অন্তত ৩৮৫ জন তালেবান সদস্য নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও ২১০ জন।

সূত্র : এশিয়ান নিউজ নেটওয়ার্ক

এসএমডব্লিউ