করোনার চতুর্থ ঢেউ রুখতে জোর চেষ্টা জার্মানির
ধীরে হলেও জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। আর তাই ভাইরাসের চতুর্থ ঢেউ মোকাবিলা করতে জোরগতিতে একাধিক তৎপরতা শুরু করেছে দেশটি। সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে।
করোনা মোকাবিলায় তৎপরতা শুরু করলেও ভাইরাসের চতুর্থ ঢেউ প্রতিহত করতে কর্তৃপক্ষ ঠিক সময়ে পদক্ষেপগুলো কার্যকর করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষে স্কুলের নতুন বছর শুরু হওয়ার আগে কতটা উদ্যোগ নেওয়া যাবে, সে বিষয়েও উঠছে প্রশ্ন।
বিজ্ঞাপন
আপাতত করোনার টিকাদান কর্মসূচিতে আরও গতি আনার ওপরই সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ টিকার সব প্রয়োজনীয় ডোজ পেয়ে গেলেও বাকিদের মধ্যে অনেকে নানা কারণে টিকা নিচ্ছেন না। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে তাদের মনে উৎসাহ জাগাতে নানা উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের বোঝাতে দ্য সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এসপিডি) চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী ওলাফ শলৎস করোনার টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের প্রতি অনুরোধ করেছেন।
জার্মানির সব মানুষ টিকা নেওয়ার সুযোগ পেলেই সরকার বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার সুযোগ বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে বলে একাধিক সূত্রে শোনা যাচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখনও কোনো নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেনি। তবে বয়স বা স্বাস্থ্যের মতো বিভিন্ন কারণে যাদের পক্ষে করোনা টিকা নেওয়া সম্ভব নয়, তাদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নিয়ম করা হবে।
করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টিকাপ্রাপ্তরাও গুরুতরভাবে আক্রান্ত হওয়ায় বয়স্ক ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের জন্য বুস্টার ডোজ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কয়েকটি দেশ। জার্মানিও সম্ভবত সেপ্টেম্বর মাস থেকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে।
সোমবারই ফেডারেল ও প্রাদেশিক স্তরের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। জার্মানির টিকা কমিশন এখনও ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সীদের মধ্যে সামগ্রিকভাবে করোনা টিকার পরামর্শ না দিলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা স্কুলে টিকা প্রয়োগের উদ্যোগ নিতে পারেন। আগামী ১০ আগস্ট প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনে সার্বিকভাবে আরও পদক্ষেপ ঘোষণা করা হতে পারে।
জার্মানিতে করোনা টিকা বাধ্যতামূলক না হলেও টিকা না নেওয়া মানুষের ওপর চাপ বেড়েই চলেছে। রোববার থেকে জার্মানিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে নেগেটিভ করোনা টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সংক্রমণের হার বাড়তে থাকায় টিকাপ্রাপ্ত ও করোনা থেকে সুস্থ ব্যক্তিরা অন্যদের তুলনায় বেশি সুযোগ পেতে চলেছেন।
এদিকে রাজধানী বার্লিনে রোববার কয়েক হাজার মানুষ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখিয়েছে। এসময় সেখান থেকে পুলিশ প্রায় ৬০০ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে। বিক্ষোভের সময়ে পুলিশের আগ্রাসী মনোভাব দেখা গেছে। ফ্রান্সেও দুই লাখের বেশি মানুষ টিকা বাধ্যতামূলক করার বিরুদ্ধে শনিবার বিক্ষোভ করেছেন।
উল্লেখ্য, ইউরোপের দেশ জার্মানিতে বর্তমানে করোনার তৃতীয় ঢেউ চলছে। এরমধ্যে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেশটিতে সংক্রমণের হার আবারও বেড়েছে।
জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের তথ্য বিশ্লেষণ করে সংবাদমাধ্যম দ্য লোকাল জানায়, জার্মানিতে গত ২৩ জুলাই প্রতি লাখে সংক্রমণের হার ছিল ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। তার আগে সংক্রমণের হার ছিল ১২ দশমিক ২ শতাংশ। আর ৬ জুলাই সংক্রমণের হার ছিল ৪ দশমিক ৯ শতাংশ।
সংক্রমণের এমন ঊর্ধ্বগতির কারণে দেশটিতে করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
টিএম