তিয়ানজিনে বুধবার তালেবানের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই

আফগানিস্তানের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালেবান বলেছে, আফগানিস্তানের ভূমিকে চীনের বিরুদ্ধে কোনোভাবেই ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। তালেবানের এই আশ্বাসের জবাবে আফগানদের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে চীন।

তালেবানের একটি প্রতিনিধি দল দুই দিনের সফরে চীনে রয়েছে। বুধবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে তালেবানের ওই প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়েছে। সফররত তালেবান প্রতিনিধি দলকে চীন বলেছে, বিদ্রোহী এই গোষ্ঠী আফগানিস্তান যুদ্ধের অবসান এবং দেশ পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করে বেইজিং।

ওই বৈঠকের পর তালেবানের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাঈম বলেছেন, তালেবানের প্রতিনিধিরা চীনকে আশ্বস্ত করেছে যে, আফগানিস্তানের ভূমিকে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। জবাবে আফগানদের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে চীন। বেইজিং বলেছে, তারা আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনও ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না। তবে সমস্যা সমাধান এবং দেশটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে।

বুধবার চীনের উত্তরাঞ্চলীয় শহর তিয়ানজিনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে তালেবানের প্রতিনিধি দলের ৯ সদস্যের বৈঠক হয়েছে। এই বৈঠকে আফগান শান্তি প্রক্রিয়া এবং নিরাপত্তা সঙ্কট নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে তালেবানের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে ওয়াং ই বলেছেন, আফগানিস্তানে শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলন এবং পুনর্নির্মাণ প্রক্রিয়ায় তালেবান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে প্রত্যাশা করছে চীন। এছাড়া চীনের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রত্যক্ষ হুমকি ইস্ট তুর্কমেনিস্তান ইসলামিক মুভমেন্টকে তালেবান দমন করবে বলেও আশা করেন তিনি। চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলে এই গোষ্ঠী সক্রিয় আছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আফগানিস্তানে সহিংসতা বৃদ্ধির পর স্পর্শকাতর এই সময়ে তালেবানের চীন সফর আন্তর্জাতিক স্তরে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির অবস্থান আরও দৃঢ় করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর একটি রাজনৈতিক শাখা অফিস আছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে, যেখানে শান্তি আলোচনা চলছে। এছাড়া চলতি মাসে ইরানেও একটি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে তালেবান; সেখানে আফগান সরকারের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে তারা।

চীন সফরের ব্যাপারে তালেবানের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাঈম এক টুইট বার্তায় বলেছেন, বৈঠকে রাজনীতি, অর্থনীতি, উভয় দেশের নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয় এবং আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি ও শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেছেন, তালেবানের মধ্যস্থতাকারী ও উপ-প্রধান মোল্লাহ বারাদার আখুন্দের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি আফগানিস্তানে নিযুক্ত চীনের বিশেষ দূতের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছে। চীনা কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে তালেবানের প্রতিনিধিরা দেশটি সফর করছেন বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ নাঈম।

চীনের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে আফগানিস্তানের। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে দুই দশকের যুদ্ধ শেষে নিজেদের সৈন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। কাতারের রাজধানী দোহায় শান্তি আলোচনায় তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় দেশজুড়ে জেলা ও সীমান্ত ক্রসিং এলাকায় হামলা বাড়িয়েছে তালেবান।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস