আঁতুড়ঘরে থাকা তিউনিসিয়ার গণতন্ত্রকে বড় ধরনের একটা সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। 

গেল সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেন এবং সংসদ ভেঙে দেন। কায়েসের রাজনৈতিক বিরোধীরা এটিকে একটি ‘ক্যু’ বলছেন। কিন্তু মহামারি মোকাবিলায় দেশটির সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে সম্প্রতি সেখানে যে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে, প্রেসিডেন্ট বলছেন- তা দমনে এ ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। এই বিক্ষোভ দেশটির অর্থনৈতিক সংকট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে বলেও দাবি তার।  

প্রধানমন্ত্রী হিশেম মেচিচ ও অন্যান্য মন্ত্রীদের সরিয়ে দেওয়ায় সড়কে নেমে উল্লাস করেছেন প্রেসিডেন্টের সমর্থকরা। কিন্তু এ উদযাপন সংঘর্ষে রূপ নেয় যখন প্রেসিডেন্টের বিরোধীরা প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নামে।   

যুক্তরাষ্ট্রের পেন্টাগনের সাবেক কর্মকর্তা ও তিউনিসিয়ার চলতি রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা রাখা সারাহ ইয়ার্কেস বলছেন, এখানে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটা হলো, এটা কি আসলে একটা ক্যু? সারাহর মতো অনেকেই এখন এ প্রশ্নটা তুলছেন। এর সোজাসাপ্টা কোনো জবাব নেই। তার কারণটা অনেকাংশে এমন যে, তিউনিসিয়ায় গণতন্ত্র আসলে এখনো আঁতুড়ঘরেই রয়েছে। 

২০১০ সালে তিউনিসিয়ার একজন ফল বিক্রেতা নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। কারণ, পুলিশ তার মালামাল জব্দ করার চেষ্টা করছিল। এ ঘটনার পর তিউনিসিয়ার কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা ও স্বৈরাচার জাইন এল আবেদিন বেন আলীর বিরুদ্ধে দেশব্যাপী তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। এই প্রতিবাদে শামিল হন মূলত সে দেশের তরুণরা। কর্তৃত্ববাদী শাসকের বিরুদ্ধে তিউনিসীয় তরুণদের এ প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের বিভিন্ন আরব ও আফ্রিকান রাষ্ট্রে। মিসর, লিবিয়া, সিরিয়াসহ আরও অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়া ২০১১ সালের প্রতিবাদের ওই ঝড়কে বলা হয় আরব বসন্ত।  

তবে এই আরব বসন্ত সত্যিকার অর্থে ওই দেশগুলোতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারেনি। কারণ, ওইসব দেশের শক্তিশালী শাসক ও তাদের অনুসারীরা প্রতিবাদী সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে প্রতিবিপ্লব শুরু করেন এবং শক্তভাবে তাদের দমন করেন। এর ফলে অনেক দেশের ক্ষেত্রে সরাসরি গৃহযুদ্ধ ডেকে আনে।

তবে তিউনিসিয়ায় তেমনটা হয়নি। সেখানে প্রতিবাদের মুখে স্বৈরশাসকের পতন হয়। সুশীল সমাজের ভূমিকায় গণতান্ত্রিক পালাবদলও হয় সেখানে। সদ্য জন্ম নেওয়া সেই গণতন্ত্র এখন বড় পরীক্ষার মুখে পড়েছে প্রেসিডেন্ট সাইদের সাম্প্রতিক পদক্ষেপে।

তিউনিসিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভক্সের সাংবাদিক জেন কিরবি কথা বলেছেন সাবেক পেন্টাগন কর্মকর্তা সারাহ ইয়ার্কেসের সঙ্গে। তাদের কথোপকথনে উঠে এসেছে তিউনিসিয়ার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির নানা দিক। ওই কথোপকথনের অংশবিশেষ-

জেন কিরবি : তিউনিসিয়াতে এখন কী হচ্ছে?
সারাহ ইয়ার্কেস : আমি বলব প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীকে যে সরিয়ে দিয়েছেন, সেটা ‘নরমাল লিগ্যাল চ্যানেলের’ বাইরে গিয়ে করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সরাতে পারেন, এর জন্য অবশ্য সংসদে তার আলাপ করার কথা। কিন্তু তিনি সংসদও ভেঙে দিয়েছেন। এটা করার অধিকার তার নেই। 

তিনি কিন্তু অন্যান্য মন্ত্রীদেরও বরখাস্ত করেছেন। তার মানে তিনি নিজেকে একরকম প্রধান নির্বাহী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। স্বাভাবিক সময়ে তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ভূমিকা পালন করেন আর প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকারপ্রধান। স্বাভাবিক সময়ে কেবল পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো প্রেসিডেন্টের নিয়ন্ত্রণে থাকে। বাকি সবকিছুই দেখেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এখন সব কিছুর দায়িত্বে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট। 

অন্যান্য মন্ত্রণালয়গুলোর কিছু কিছু এখন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, যেগুলোতে টেকনোক্রেট মন্ত্রী বেশি রয়েছেন সেগুলো। কিন্তু আসল কথা হলো, এখানে প্রেসিডেন্টই এখন একমাত্র ব্যক্তি, যিনি সবকিছুর ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখছেন। 

জেন কিরবি : তো বরখাস্ত হওয়া প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ এখন কী করছে? সংসদ কি এখনো কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে? 
সারাহ ইয়ার্কেস : প্রধানমন্ত্রী আসলে খুব একটা সক্রিয় হননি, কিন্তু সংসদ বিষয়টা নিয়ে চুপ করে বসে নেই। 

প্রেসিডেন্ট যখন ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি বলেছিলেন তিউনিসিয়ার সংবিধান মেনেই ঘোষণা দিয়েছেন। তিউনিসিয়ার সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৮০ অনুসারে প্রেসিডেন্ট জরুরি ক্ষমতা নিতে পারেন। কিন্তু আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় তিউনিসিয়ার বেশ কজন আইন বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্যদের ফলো করছি। তাদের কথায় মনে হচ্ছে, ৮০ অনুচ্ছেদ অনুসারে পুরো প্রক্রিয়াটা যেভাবে হওয়ার কথা সেভাবে হয়নি।

আর সংসদের বিষয়টা হলো- এখানকার মূল দল, যেটার ওপর সাইদ নাখোশ সেটা হলো একটা ইসলামপন্থি দল- ইন্নাহদা পার্টি। সংসদে তাদের আছে মাত্র ২৫ শতাংশ আসন।  

সাইদ কিন্তু একেবারে শুরু থেকে তাদের বিরোধিতা করে আসছেন। আর তাই অনেকে বর্তমান ঘটনাগুলো ইসলামপন্থিবিরোধী একটা পদক্ষেপ বলে চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন। এখানেই তিউনিসিয়ার বর্তমান ঘটনার সাথে মিসরের ঘটনার মিল পাওয়া যায়। মিসরের বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছে, তারা ক্যুর মাধ্যমে মুসলিম ব্রাদারহুডকে ক্ষমাতচ্যুত করেছিল। তিউনিসিয়াতেও যে হুবহু একই ঘটনা ঘটছে তা নয়, কিন্তু পুরো ঘটনায় কিছুটা মিল রয়েছে।   

ইন্নাহদা কিন্তু চুপ করে বসে নেই। তারা বিবৃতি দিচ্ছে, আন্তর্জাতিক মহলে তারা এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, যা হয়েছে তা অবৈধভাবে হয়েছে, এটা ক্যু, এর প্রতিবাদে মানুষের পথে নামা উচিৎ এবং প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা উচিৎ। আর তা যদি নাও হয় প্রেসিডেন্টকে অন্তত তার ক্ষমতার নির্দিষ্ট গণ্ডিতে ফিরিয়ে দেওয়া হোক এবং সরকারের প্রতিটা প্রতিষ্ঠানের যেভাবে কাজ করার কথা সেভাবে যেন কাজ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হোক। 

দেশজুড়ে কিন্তু প্রচুর প্রতিবাদও হচ্ছে। আমরা দেখছি প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করায় প্রেসিডেন্টের সমর্থকরা রাস্তায় নেমে উল্লাস করছেন, জাতীয় সঙ্গীত গাচ্ছেন। তিউনিসিয়ায় যেভাবে মহামারি মোকাবিলা করা হচ্ছিল তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছিল এই প্রেসিডেন্টের সমর্থকদের অনেকের। এর সাথে আমরা এটাও দেখছি যে ইন্নাহদার সমর্থক ও আরও অনেকে প্রেসিডেন্টের বিরোধিতা করে রাস্তায় নামছেন। দুপক্ষ সংঘর্ষেও জড়াচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে।   

জেন কিরবি: প্রেসিডেন্টের সাথে কি নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের যোগ আছে? 
সারাহ ইয়ার্কেস : তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নন। ২০১৯ সালে তিনি নির্বাচনে যে জেতেন, নির্দিষ্ট কোনো দলের সাথে তার সম্পৃক্ত না থাকার বিষয়টা সেখানে ভূমিকা রাখে। তিনি কিন্তু খুব একটা প্রচারণাও চালাননি। 

জেন কিরবি : প্রেসিডেন্ট ডানপন্থি নাকি বামপন্থি? 
সারাহ ইয়ার্কেস : এখানে ডান-বামে বিভক্ত করা কঠিন। তবে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে কোনো দল ইসলামপন্থি না ইসলামপন্থি নয় সেটা। প্রেসিডেন্ট কোনোভাবেই সেকুলার নন। তিনি একজন ধার্মিক মানুষ। তিনি খুবই রক্ষণশীল। কিন্তু ইসলামপন্থি দলগুলোকেও তিনি ভালো চোখে দেখেন না।  

এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটা ভূমিকা রাখছে একটা রাজনৈতিক দল। এ দলটাকে আবার মার্কিন বা পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কোনো গোত্রভুক্ত করা কঠিন। কিন্তু তারা আবার আগের কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে, বেন আলীর যুগে ফিরে যাওয়ার চেষ্টায় আছে, সেটার প্রচারণাও চালাচ্ছে তারা। এ দলটার নাম ফ্রি দিস্তৌরিয়ান পার্টি। আরবিতে দিস্তৌরিয়ান অর্থ সংবিধান। এর নেতৃত্বে আছেন আবির মৌসি। সংসদে তিনি কিন্তু অনেক কথা বলেন। বলা যায় এখন রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় বিভিন্ন মতাদর্শের যে দলগুলো রয়েছে তার তৃতীয় পক্ষ হলো এই মৌসি। 

জেন কিরবি : এখন পর্যন্ত কী মনে হচ্ছে, এই মৌসির অংশ, প্রেসিডেন্ট যা করেছেন তারা কি সেটাকে সমর্থন করছেন? 
সারাহ ইয়ার্কেস : না, এরা অবশ্যই প্রেসিডেন্টকে পছন্দ করে না। কিন্তু মজার বিষয় হলো, তারা কিন্তু এখন নীরব। ইসলামপন্থিদের তারা প্রচণ্ড রকমের বিরোধী। সম্ভবত তারাই তিউনিশিয়ার সবচেয়ে বড় ইসলামপন্থি-বিরোধী অংশ। তাই মনে হচ্ছে, এই যে প্রেসিডেন্ট ইসলামপন্থিদের ক্ষমতাচ্যুত করলেন এটাতে তাদের বেশ খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু আমার মনে হয়, তারা এখন  অপেক্ষা করার চেষ্টায় আছে শেষ পর্যন্ত কী হয় তা দেখার জন্য। 

জেন কিরবি : ইসলামপন্থি দলগুলোর সাথে অন্যদের বিরোধ কেন? 
সারাহ ইয়ার্কেস : ধর্মের ভূমিকা এবং তিউনিসিয় সমাজে যে পরিবর্তন এসেছে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিপ্লবের আগে তিউনিসিয়া নিজেকে এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর চেয়ে তুলনামূলক বেশি সেকুলার হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করেছিল। সেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতাকে মর্যাদা দেওয়া হতো এবং যারা ধর্মের বিষয়ে খুব একটা আগ্রহী না, তাদের জন্যও নিরাপদ দেশ বলে বিবেচিত হতো।  

আপনি যদি তিউনিসিয়ানদের জিজ্ঞাসা করেন তার ধর্ম কী, বেশিরভাগই বলবে মুসলিম। ব্যাপারটা অনেকটা আমেরিকানদের মতো, তারা খ্রিস্টান, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, গির্জাগুলোতে নিয়মিত তাদের যাওয়া-আসা আছে। 

তাই ইতিহাসের দিকে তাকালেও তিউনিসিয়াকে সেকুলার রাষ্ট্র হিসেবেই দেখা যায়, যেখানে ধর্ম ও রাজনীতি একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। বেন আলীর সময়ে ইসলামপন্থিদের জেলে ঢোকানো হয় এবং নির্যাতন করা হয়। কিন্তু আরব বসন্তের পর এই ইসলামপন্থিরা যখন আবার রাজনীতির মূল ধারায় ফিরলেন তখন সেকুলারপন্থিদের সাথে তাদের বিরোধ দেখা দেয়। তিউনিসিয়া যেন ইসলামপন্থি কোনো রাষ্ট্রে পরিণত না হয়- এমনটা যারা চেয়েছিলেন তাদের সাথে বিরোধ দেখা দেয় ইসলামপন্থিদের।  

জেন কিরবি : উত্তেজনাটা এখন কেন বাড়ছে? 
সারাহ ইয়ার্কেস : উত্তেজনাটা সব সময়ই ছিল। তবে পার্থক্যটা তৈরি করছে মেরুকরণ। আগে একধরনের ঐকমত্যের একটা সরকার ছিল, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মধ্যকার পার্থক্যগুলো নিজেরাই দূরে সরিয়ে রাখত। আর এখন সংসদে তারা নিজেরাই লড়ছে। আর এখন কট্টর দলও বেড়েছে, আমি আগেও বলেছি আবির মৌসির দলের কথা। এরসঙ্গে রয়েছে আল-কারামো জোট। তারা তুলনামূলক বেশি রক্ষণশীল ইসলামপন্থি দল, যারা বিদ্যমান রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণের চেষ্টায় আছে। তারা  মনে করে, রাষ্ট্র্রীয়ভাবে ইন্নাহদা ধর্মপ্রচারে খুব একটা ভূমিকা রাখছে না বা ইন্নাহদা খুব একটা ধার্মিক না। তো দেখা যাচ্ছে তারাও এই মতবিরোধে প্রবেশ করেছে। 

জেন কিরবি : শুরুর দিকে যে প্রশ্নটা তুলেছিলেন, এটা কি ক্যু? 
সারাহ ইয়ার্কেস : মহামারি শুরুর পর সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে তিউনিসিয়া। বিষয়টা নিয়ে সেখানকার জনগণ ক্ষুব্ধ, তারা রাস্তায় নেমে এর প্রতিবাদ শুরু করে। ক্ষমতা কব্জা করার এমন একটা ছক প্রেসিডেন্ট কয়েক মাস ধরেই কষছিলেন। কয়েক মাস আগের একটা মেমোও ফাঁস হয়েছে, যেটা সত্যি হতে পারে আবার মিথ্যাও হতে পারে। সেখানে দেখানো হয়েছে ঠিক কীভাবে প্রেসিডেন্ট সব ক্ষমতা দখল করবেন আর সংসদ ভেঙে দেবেন।  

তাই তিনি যা করছেন তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। তাই করোনা নিয়ে যে বিক্ষোভ চলছিল, সেটাকেই কাজটা করার জন্য উপযুক্ত সময় মনে করেন তিনি। 

কয়েকদিন আগে প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মহামারি মোকাবিলার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়ার। এর অর্থ হলো তিনি আগে থেকেই এগুলো শুরু করেছিলেন। আর এ সময়টায় এসে তিনি দেখলেন মানুষ সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। সে সুযোগটাই তিনি নিয়েছেন। 

জেন কিরবি : সুশীল সমাজের অবস্থান কী? বিশেষ করে যারা তিউনিসিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছিলেন, এখন তাদের অবস্থান কী? 
সারাহ ইয়ার্কেস :  তারাও বিভক্ত। আমার মনে হয় গণতন্ত্রপন্থি  অ্যাকটিভিস্টদের অনেকে উদ্বিগ্ন, তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ারই কথা। প্রেসিডেন্টকে নিয়ে অনেকে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। কারণ তারা মনে করতেন, প্রেসিডেন্টের আচরণ আসলে প্রকৃত গণতন্ত্রপন্থি নয়। আমার মনে হয় গণতন্ত্রপন্থি অ্যাক্টিভিস্টরা প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপকে গণতন্ত্রবিমুখ বলেই মনে করছেন। 

জেন কিরবি : আপনি আগেও উল্লেখ করেছেন যে তিউনিসিয়ার ভেতরেই আগের সেই কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার একটা প্রবণতা ছিল। 
সারাহ ইয়ার্কেস : পুরোনো ওই শাসনব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার একটা প্রবণতা শুরু থেকেই ছিল। আবির মৌসি নামে যে নারীর কথা আমি আগেও বলেছি, তিনি বেন আলী যুগে ফিরে যেতে চান। ওই চিন্তাধারাকে তিনি সত্যিই লালন করেন। 

এর সঙ্গে, মহামারি দেশটার অর্থনীতি সত্যিই ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই অনেক মানুষের অবস্থা এখন ১০ বছর আগের সময়ের চেয়ে অনেক বেশি খারাপ। তাহলে গণতন্ত্র দিলো কী? এখন মানুষ সরকারের সমালোচনা তো করতে পারে, কিন্তু নিজে খেতে পারে না। এটা কি কেউ মেনে নেবে? বেশিরভাগেরই জবাবটা হবে ‘না’। আমি বরং চুপ থেকে (সরকারের সমালোচনা না করে) ভালোভাবে খেয়ে-পরে বাঁচতে চাই।  

জের কিরবি : যদিও এটা হয়তো এখনো বলার সময় আসেনি। কিন্তু আমার খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে। আরব বসন্ত থেকে তিউনিসিয়া যা পেয়েছিল আর এখন যা হচ্ছে, এ নিয়ে আপনার ভাবনা কী? 
সারাহ ইয়ার্কেস : আমি এখনো আরব বসন্তকে বড় ধরনের একটা সাফল্যই বলব। অবশ্যই আমি মনে করি যে, গত কয়েকদিনে যা হয়েছে এবং সামনেও যা ঘটবে সেগুলো গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। 

কিন্তু এর সঙ্গে আমি এটাও মাথায় রাখতে চাই যে, রাস্তায় প্রতিবাদ করার মানুষ আছে। কী ঘটছে তা নিয়ে মানুষ প্রশ্ন তুলছে। আমি আশা করব শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রই জিতবে। আমি বিশ্বাস করি, এটা সম্ভব। কারণ তিউনিসিয়ার মানুষের সে শক্তি আছে, সেখানকার সুশীল সমাজ শক্তিশালী। আমি সত্যিই আশা করি যে, তিউনিসিয়ায় এটাই গণতন্ত্রের শেষ নয়।   

অনুবাদ : নাঈম ফেরদৌস রিতম।  

এনএফ/জেএস