ডেল্টার হুমকিতে যুক্তরাষ্ট্রে আবারও ফিরল মাস্কের বাধ্যবাধকতা
করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর তালিকায়ও শীর্ষে রয়েছে দেশটি। মাঝের কিছু সময় প্রকোপ কমে এলেও ভারতে প্রথম শনাক্ত করোনার ডেল্টা ধরনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সংক্রমণ। আর এতেই ফের উত্তর আমেরিকার এই দেশটিতে ফিরেছে মাস্কের কড়াকড়ি।
শুধু তাই নয়, করোনা প্রতিরোধে দু’টি ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের সবাইকে ফের মাস্ক পরতে হবে। বিশেষ করে ঘরোয়া কোনো অনুষ্ঠানে বা যে সব জায়গায় করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে সেখানে। ভাইরাসের ডেল্টা ধরনের সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সংস্থাটি করোনা নিয়ে নতুন এই নির্দেশনা জারি করে। সিডিসি বলছে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যারা ইতোমধ্যেই দু’টি ভ্যাকসিন নিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদেরকেও এখন থেকে আবার মাস্ক পরতে হবে। ভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় বাধ্য হয়ে আগের সিদ্ধান্ত (মাস্ক পরার ব্যাপারে শিথিলতা) পরিবর্তন করা হচ্ছে।
এদিকে সিডিসি’র পরিচালক ড. রচেল ওয়ালেনস্কি জানিয়েছেন, যারা টিকার দুইটি ডোজ নিয়েছেন, তারাও অন্যের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু অঙ্গরাজ্য ও বিশ্বের কয়েকটি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করার পরই এই সিদ্ধান্তে এসেছেন তারা।
সিডিসি’র সুপারিশ অনুযায়ী, যারা ঘরের ভেতরে কাজ করেন, বিশেষ করে শিক্ষক, ছাত্র, সরকারি, বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ স্কুল বা অফিসে যারা বাইরে থেকে আসেন তাদের সবাইকে মাস্ক পরতে হবে।
এদিকে সিডিসি’র এই নতুন নির্দেশনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, করোনা যেখানে ছড়াচ্ছে, সেখানে মানুষকে সিডিসি’র নতুন নির্দেশ পালন করতে হবে। তিনি নিজেও এই নীতি মানবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তার মতে, সিডিসি’র নতুন নীতি থেকে এটাও বোঝা যাচ্ছে, সবাইকে দ্রুত ভ্যাকসিন নিতে হবে।
করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে অধিকাংশ সময়েই যুক্তরাষ্ট্রের মানুষকে মাস্ক পরতে পরামর্শ দিয়ে এসেছে সিডিসি। ঘরের বাইরে যখন অন্যের থেকে দূরত্ব ছয় ফিটের কম থাকবে তখন মাস্ক অবশ্যই পরতে হবে বলে নির্দেশনাও জারি করেছিল সংস্থাটি।
তবে জোরগতিতে টিকাদান কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়ায় এবং সংক্রমণের হার কমে আসায় চলতি বছরের এপ্রিলে সিডিসি মাস্কের ব্যাপারে এই কড়াকড়ি অনেকটা শিথিল করে। সেসময় সংস্থাটি জানায়, যারা ইতোমধ্যেই দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন, তাদের আর মাস্ক পরার দরকার নেই। খুব বেশি ভিড় রয়েছে এমন জায়গায় গেলে মাস্ক পরতে হবে, না হলে নয়।
পরে মে মাসে আবার নিয়মের পরিবর্তন করা হয়। তখন বলা হয়, বাইরে ভিড়ের মধ্যে এবং বদ্ধ জায়গাতেও আর মাস্ক পরার দরকার নেই। শুধু বাস, ফ্লাইট এবং হাসপাতালে মাস্ক পরতে হবে।
তবে ভারতে প্রথম শনাক্ত করোনার ডেল্টা ধরনের কারণে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ফের বেড়েছে ভাইরাসের সংক্রমণ। দেশটিতে এখন প্রতিদিন গড়ে ৫৭ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তার মধ্যে ২৪ হাজার মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে।
যদিও দেশটির ৫০ শতাংশ মানুষকে ইতোমধ্যেই টিকা দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে দেশটি জানায়, নতুন করে যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ ভাইরাসের ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে করোনার সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে।
এই সময়ের মধ্যে দেশটিতে নতুন করে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯ হাজার ৫৯১ জন। কোভিড-১৯ মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৫৩ হাজার ৯২৩ জন করোনায় আক্রান্ত এবং ৬ লাখ ২৭ হাজার ৩৫১ জন মারা গেছেন।
টিএম