অল্প পরিমাণ পানি বর্ণহীন মনে হতে পারে। কিন্তু ঘনত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে পানির নীল বর্ণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। কারণ পানির রং হলো হালকা নীল। তবে আর্জেন্টিনার দক্ষিণ পাতাগোনিয়া অঞ্চলের একটি অগভীর হ্রদের পানি হঠাৎ উজ্জ্বল গোলাপি বর্ণ ধারণ করেছে। সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি ও সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

হ্রদটি আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ারস থেকে প্রায় ৮৭০ মাইল (১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার) দক্ষিণে অবস্থিত। তবে কেন হঠাৎ হ্রদের পানি উজ্জ্বল গোলাপি বর্ণ ধারণ করলো?

বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশকর্মীরা এই ঘটনার কারণ হিসেবে রফতানির জন্য চিংড়ি সংরক্ষণে ব্যবহৃত রাসায়নিকের দূষণকে দায়ী করেছেন। তারা জানিয়েছেন, মাছের কারখানায় ব্যবহৃত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল পণ্য সোডিয়াম সালফাইটের কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। এই কাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক বর্জ্যগুলো চুবুত নদীর মাধ্যমে হ্রদের পানিতে গিয়ে মিশেছে।

অবশ্য নদী ও জলাশয়ের আশপাশে দুর্গন্ধ এবং অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছিলেন। পাবলো লাডা নামে এক পরিবেশকর্মী বার্তাসংস্থা এএফপি’কে বলেন, নদী বা হ্রদের পানি দূষিত হওয়া থেকে বাঁচাতে যাদের (সরকার) দায়িত্বপালন করা উচিত, তারাই মানুষকে দূষণ ছড়ানোর অনুমতি দেয়।

তিনি আরও বলেন, ওই হ্রদটি গত সপ্তাহে গোলাপি বর্ণ ধারণ করে। চলতি সপ্তাহের রোববারও ওই অস্বাভাবিক রং বজায় ছিল।

পরিবেশ প্রযুক্তিবিদ এবং ভাইরোলজিস্ট ফেডেরিকো রেস্ট্রেপো এএফপি’কে বলেছেন, মাছের বর্জ্যে সোডিয়াম সালফাইটের কারণে এই রং পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে। আইন অনুযায়ী, এ ধরনের বর্জ্য ফেলার আগে পরীক্ষা করা উচিত ছিল।

সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থানীয় ট্রেলেউর রাউসনের বাসিন্দারা শহরের উপকণ্ঠে বিভিন্ন মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্পের বর্জ্য ফেলা নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। ওই এলাকা দিয়ে প্রক্রিয়াজাত মাছের বর্জ্য বহনকারী ট্রাকগুলোর পথও অবরোধ করেন তারা। এ ধরনের ঘটনার কারণে ওই রাস্তা দিয়ে ট্রাকে করে বর্জ্য বহন পরিবর্তনের বদলে তা পানিতে ফেলে দেওয়ার অনুমতি দেয় প্রশাসন।

তবে চুবুত প্রদেশের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক বিভাগের প্রধান জুয়ান মিশেলাইদ গত সপ্তাহে এএফপি’কে জানান, ‘এমন রং পরিবর্তনে কোনো ক্ষতি হয় না এবং কয়েক দিনের মধ্যে তা অদৃশ্য হয়ে যায়।’

অন্যদিকে পরিবেশকর্মী লাডার অভিযোগ, মাছ প্রক্রিয়াকরণে কর্মসংস্থান হয়, এটা ঠিক। কিন্তু সংস্থাগুলো নিজেদের বর্জ্য ৩৫ মাইল দূরে অবস্থিত পুয়ের্তো মাদ্রিনের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে নিয়ে যেতে চায় না। কারণ এতে তাদের লাখ লাখ টাকা ব্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পায়।

টিএম