প্রায় পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) তলব করেছেন দেশটির মাকাতি শহরের বিচার আদালত।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী রিজাল ব্যাংক আদালতে নোটিশ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে এবং আরসিবিসির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে অভিযোগ করেছিল, তার ভিত্তিতেই এই নোটিশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাংকটির কর্তৃপক্ষ।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রাখা রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার ফেরত পেতে নিউইয়র্কের ম্যানহাটান ডিসট্রিক্ট আদালতে যে মামলা করেছিল বাংলাদেশ সেটিই চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা মনে করি এটি আগের মামলারই ধারাবাহিকতা। আর রিজাল ব্যাংকের কর্মকর্তাদের রিজার্ভ চুরির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ সেখানকার আদালতে আগেই প্রমাণ হয়েছিলো। নতুন করে আমরা কিছু করিনি।’

ফলে এটি এখনও স্পষ্ট নয় যে মাকাতির আদালত থেকে ঠিক কোন মামলায় রিজাল ব্যাংককে তলব করা হয়েছে। কারণ ফিলিপাইনেই এ সংক্রান্ত অন্তত বারটি মামলা হয়েছিলো এবং কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কারাদণ্ডসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছিলো।

রিজার্ভ চুরি: যা ঘটেছিলো

২০১৬ সালে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে আট কোটি দশ লাখ ডলার চুরি যায় এবং এই অর্থ ফিলিপিন্সের মাকাতি শহরে রিজাল ব্যাংকের শাখায় চারটি ভুয়া অ্যাকাউন্টে যায় এবং সেখান থেকে দ্রুত অর্থ উত্তোলন করা হয়।

পরে চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে মাত্র দেড় কোটি ডলার পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়।

ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা সুইফট পেমেন্ট পদ্ধতিতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়।

এ ঘটনায় সম্পৃক্ততার দায় প্রমাণ হওয়ায় ম্যানিলাভিত্তিক রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) এর প্রাক্তন শাখা ব্যবস্থাপক মাইয়া দিগুইতোকে কারাদণ্ড ও জরিমানা করেন ফিলিপাইনের আঞ্চলিক আদালত।

এই অবৈধ অর্থ পাচার প্রতিরোধে ব্যর্থতার কারণে ২০১৬ সালের অগাস্টেই রিজার্ভ কমার্শিয়াল ব্যাংককে রেকর্ড পরিমাণ প্রায় ১শ কোটি পেসো অর্থাৎ ১ কোটি ৯১ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা করে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আরসিবিসি'র সাবেক কোষাধ্যক্ষ এবং যে শাখাটি থেকে অর্থ উত্তোলন করা হয়েছিল সেখানকার পাঁচজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছিলো।

এছাড়া ফিলিপাইনের আইন বিভাগ এ বিষয়ে প্রায় ১২ টি মামলা পরিচালনা করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন এরই ধারাবাহিকতাতেই মাকাতির আদালত থেকে রিজাল ব্যাংককে নতুন করে ডাকা হয়েছে।

সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, নিউইয়র্কের আদালতে কয়েকটি মামলা করেছিলো বাংলাদেশ যেগুলো খারিজের আবেদন করেছিলো রিজাল ব্যাংক কিন্তু আদালত তাদের আবেদন খারিজ করে চারটি মামলা চালিয়ে যাওয়ার রায় দিয়েছিলো।

জড়িতদের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি, অগ্রগতি নেই বিচারেও

২০১৬ সালের মার্চে ঢাকার মতিঝিল থানায় অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন উপ-পরিচালক।

পরে আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সিআইডিকে দায়িত্ব দিয়েছিলো।

গত মাসের তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের একটি তারিখ থাকলেও তারা তা দিতে পারেনি ফলে আদালত নতুন তারিখ দেয় ১৩ই জানুয়ারি।

এছাড়া রিজার্ভ চুরির বিষয়ে কোনো তদন্ত প্রতিবেদনও বাংলাদেশ সরকার কখনো প্রকাশ করেনি।

সূত্র: বিবিসি

এসএমডব্লিউ