ইরাকের মাটিতে বিদেশি কোনো সৈন্যের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মুস্তফা আল-খাদেমি

চলতি বছরের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ইরাক থেকে দেশে ফিরে যাবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যদিও এরপরও ইরাকের সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া অব্যহত রাখবে ওয়াশিংটন। মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুস্তফা আল-খাদেমির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈঠকের পর এই ঘোষণা দেওয়া হয়। ইরাকে বর্তমানে আড়াই হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করছে এবং তাদের মূল কাজ হচ্ছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা করা।

বিবিসি বলছে, ইরাকে মার্কিন সেনাদের সংখ্যা হয়তো একই থাকবে। তবে ইরাকি প্রধানমন্ত্রীকে সহায়তা চেষ্টার অংশ হিসেবে সম্ভবত এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত বছর বাগদাদে ইরানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানি এবং ইরান-সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়া বাহিনীর কমান্ডারকে ড্রোন হামলার মাধ্যমে হত্যা করে মার্কিন বাহিনী। এরপর থেকে ইরাকে মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতি একটি বড় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।

ইরান-ঘনিষ্ঠ ইরাকি রাজনৈতিক দলগুলো এরপর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সকল সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে। যদিও জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটকে ইরাকের জন্য এখনও হুমকি বিবেচনা করছেন অনেকে।

হোয়াইট হাউসে বৈঠকের সময় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুস্তফা আল-খাদেমিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, আমাদের সন্ত্রাস বিরোধী সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। এমনকি সেনা প্রত্যাহারের মাধ্যমে সম্পর্কের নতুন ধাপে পৌঁছানোর পরও।

জবাবে ইরাকি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় আমাদের সম্পর্ক এখন অনেক শক্তিশালী। অর্থনীতি, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ আরও অনেক খাতে দুই দেশের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’

ইরাকের মাটিতে বিদেশি কোনো সৈন্যের প্রয়োজন নেই বলেও এসময় জোর দিয়ে জানান খাদেমি।

অবশ্য ওয়াশিংটন সফরে যাওয়ার আগে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ইরাকে মার্কিন সৈন্যদের প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মুস্তফা আল-খাদেমি। মার্কিন বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে (এপি) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন।

গত রোববার প্রচারিত ওই সাক্ষাৎকারে মুস্তফা আল-খাদেমি বলেন, ইরাক এখনও প্রশিক্ষণ এবং সামরিক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাবে। সৈন্যদের প্রত্যাহারের জন্য একটি সময়সীমা জানতে চাইবে; যা ওয়াশিংটন ও বাগদাদের মধ্যে চলমান আলোচনায় গত এপ্রিলে ঘোষণা করা হয়েছিল।

এর গত বছরের শেষের দিকে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরাক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য কমানোর ঘোষণা দেন। তারপর প্রায় ৫০০ সৈন্যকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। বর্তমানে ইরাকে অন্তত আড়াই হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করছে।

অবশ্য ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। পরিবির্তিত পরিস্থিতিতে দেশটিতে নিরাপত্তা শূন্যতা তৈরি হয় এবং জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের উত্থান ঘটে। পরে ২০১৪ সালে আবারও দেশটিতে সেনা মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র।

টিএম