পেগাসাস-কাণ্ড তদন্তে পশ্চিমবঙ্গে কমিশন
পেগাসাস-কাণ্ড নিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করল পশ্চিমবঙ্গে মমতার রাজ্য সরকার। কমিশনে থাকছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি (অবসরপ্রাপ্ত) এমবি লকুর এবং কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি (অবসরপ্রাপ্ত) জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে ‘মোবাইল ফোনের অবৈধ হ্যাকিং বা ট্র্যাকিং বা রেকর্ডিং’ নিয়ে তদন্ত করবে সেই কমিশন। সোমবার দিল্লি সফরে যাওয়ার আগে রাজ্য সরকারের দফতর নবান্নে মমতা এই ঘোষণা দেন।
বিজ্ঞাপন
এমনিতেই পেগাসাস-কাণ্ডে গত সপ্তাহ থেকে উত্তাল ভারতের সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন। এর মধ্যে বিজেপি সরকারের উপর আরও চাপ বাড়াতে ‘প্রথম রাজ্য’ হিসেবে পেগাসাস-কাণ্ড নিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করলো পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
নবান্নে সংবাদ সম্মেলনে মমতা বলেন, ১৯৫২ সালের তদন্ত আইনের তিন নম্বর ধারার আওতায় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ব্যক্তির ‘মোবাইল ফোনের অবৈধ হ্যাকিং বা ট্র্যাকিং বা রেকর্ডিং’ নিয়ে তদন্ত করবে কমিশন। এই সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভায় পাশ হয়ে গেছে।
একইসঙ্গে মমতা জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু সেই পদক্ষেপ না নেওয়া পশ্চিমবঙ্গ সরকার কমিশন গঠন করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতার কথায়, ‘কেউ যদি না জাগে, তাকে জাগাতে হয়।’
মমতা বলেন, ‘দেশের অনেক রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, শিল্পপতির ফোনে আড়িপাতা হয়েছে। আমরা সংসদের বাদল অধিবেশনে বিক্ষোভ দেখিয়েছি। ভেবেছিলাম কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু কেন্দ্র কোনও রকমের ভ্রুক্ষেপ করেনি।’
গত ১৮ জুলাই ‘দ্য গার্ডিয়ান’, ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’, ‘দ্য ওয়্যার’-সহ ১৭টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের একটি গোষ্ঠীর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ইসরায়েলি স্পাইওয়্যার ‘পেগাসাস’ ব্যবহার করে ভারতসহ বিশ্বের হাজারো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ফোনে আড়িপাতা হয়েছে।
‘দ্য ওয়্যারের ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের ফোনে আড়িপাতা হয়েছিল। সম্ভাব্য তালিকায় তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক, এমপি ও মমতার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও ছিল বলে জানানো হয়।
তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-কে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় ভারত সরকার ওই প্রতিবেদনগুলোকে ‘মাছ ধরার অভিযান’ বলে উড়িয়ে দিয়ে জানিয়েছে, নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর সরকারি নজরদারি চলছে এমন দাবির পক্ষে কোনো মজবুত ভিত্তি বা সত্যতা নেই।
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, ‘মৌলিক অধিকার হিসেবে বাকস্বাধীনতার প্রতিজ্ঞা ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি। আমরা সর্বদা খোলামেলা কথোপকথনের সংস্কৃতিতে জোর দিয়ে একটি অবগত নাগরিক সমাজের পক্ষে থেকেছি।’
পরে পেগাসাস-কাণ্ডের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৈষ্ণের দাবি, ‘সুপ্রিম কোর্টসহ সব পক্ষ অতীতে এমন অভিযোগ খারিজ করেছে। এর তথ্যগত ভিত্তি নেই।’
এএস