করোনার টিকা নিয়ে আইনের বিরোধিতায় ফ্রান্স-ইতালিতে বিক্ষোভ
সম্প্রতি ফ্রান্সে একটি বিল পাস হয়েছে যেখানে সকল স্বাস্থ্যকর্মীকে করোনার টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ও রেস্তোরাঁ বা যাদুঘরে প্রবেশে ‘ভাইরাস পাস’ নামে বিশেষ একটি অনুমতিপত্র থাকার কথা বলা হয়েছে। এ বিলের বিরোধিতায় গতকাল শনিবার বিক্ষোভ হয়েছে দেশটির বিভিন্ন স্থানে; যাতে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ অংশ নেন।
ইতালিতেও একই ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বিক্ষোভকারীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখলেও জলকামান ব্যবহার করে প্যারিসে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে পুলিশ।
ফ্রান্সে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে- এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষে ভাইরাস বিল পাস হয়েছে। এরপর সিনেটে শনিবার দেশটির আইনপ্রণেতারা এ বিলের পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা করেছেন। ফরাসি সরকার বলছে, তারা করোনা সংক্রমণ কমাতে টিকাদানে গতি বাড়াতে চায়। একইসঙ্গে আবার যাতে লকডাউনে যেতে না হয়, সে চেষ্টা রয়েছে তাদের।
ইতোমধ্যে ফ্রান্সের অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ককে করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জরিপ থেকে এও জানা যাচ্ছে যে, নতুন যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বেশিরভাগ ফরাসি তা সমর্থন করেন।
তারপরও শনিবার ফ্রান্সের বিভিন্ন অঞ্চলে যে বিক্ষোভ হয়েছে তার একটিতে বিক্ষোভকারীরা ‘মুক্তি চায়’ বলে স্লোগান দিয়েছেন।
বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগ শান্ত থাকলেও কেউ একজন, একজন পুলিশ কর্মকর্তার গায়ে একটি চেয়ার ছুঁড়ে মারলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ তখন টিয়ার গ্যাস ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে বিক্ষোভকারীরা সরে গিয়ে অন্য জায়গায় বসলে পুলিশ তখন তাদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করে।
এ বিক্ষোভে যারা অংশ নিয়েছিলেন তারা মূলত ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ওপর ক্ষুব্ধ। জাদুঘর, সিনেমা হল ও বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে যেতে ‘হেলথ পাস’ বাধ্যতামূলক করায় তারা ক্ষুব্ধ। এ বিলের আওতা আরও বাড়িয়ে সকল রেস্তোঁরা ও বারে ঢুকতে ওই ‘হেলথ পাস’ বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা রয়েছে ফরাসি সরকারের।
আর এই পাস পেতে হয় দুই ডোজ টিকা নেওয়া থাকতে হবে, নতুবা কয়েকদিনের মধ্যে করোনা টেস্ট করে নেগেটিভ ফলের সনদ থাকতে হবে অথবা করোনা থেকে সেরে ওঠার প্রমাণ থাকতে হবে।
এই হেলথ পাসের বিষয়ে বা করোনা টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে কতটা কঠোর হওয়া যায় তা নিয়ে ফরাসি আইনপ্রণেতারা দ্বিধাবিভক্ত। তবে এরইমধ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে দেশটিতে। মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে ফ্রান্সে ১ লাখ ১১ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। আর জুলাইয়ের শুরুর দিকে যেখানে দৈনিক সংক্রমণ কয়েক হাজারে নেমে এসেছিল, সেখানে এখন দিনে ২০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে।
বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ কোটি মানুষ করোনার টিকা নিয়েছেন এবং এ টিকা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্যই এখন খুব সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। তারপরও বিক্ষোভে যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের বক্তব্য হচ্ছে, এ বিষয়টা নিয়ে খুব তাড়াহুড়া করা হচ্ছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একজন স্বাস্থ্যকর্মী বলছেন, প্রয়োজনে তিনি নিজের চাকরি হারাতে রাজি আছেন, কিন্তু এখন টিকা নিতে তিনি প্রস্তুত না।
আয়ুব বৌগলিয়া নামে একজন প্রকৌশলী বলছেন, ফ্রান্সের মানুষ যাতে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এ জন্য আমাদের আরেকটু অপেক্ষা করা দরকার। আমার মনে হয় টিকা নেওয়ার জন্য এভাবে হুমকি দিয়ে ও ব্ল্যাকমেইল করে কাজ হবে না।
একই ধরনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে ইতালির রোম, মিলান, ভেরোনাসহ বেশ কয়েকটি শহরে। সেখানে সরকার নিয়ম করেছে, ইনডোর ডাইনিং, মেলা, স্টেডিয়াম, সিনেমা হল ও অন্যান্য জনবহুল এলাকায় প্রবেশে বাধ্যতামূলক গ্রিন পাস থাকতে হবে। এ গ্রিন পাসটি ফ্রান্সের হেলথ পাসের মতোই কাজ করবে।
ইতালিতেও বিক্ষোভকারীরা স্বাধীনতার স্লোগান দিয়েছেন এবং একইসঙ্গে বলেছেন, তারা চাকরি যাওয়ার পরোয়া করেন না।
আগস্টের ৩ তারিখ থেকে নতুন এই নিয়ম কার্যকর করতে যাচ্ছে ইতালি। এর বিপক্ষে অনেকে অবস্থান নিলেও নতুন নিয়মের ঘোষণা আসায় এরইমধ্যে দেশটিতে টিকা নেওয়ার অ্যাপয়েন্টমেন্ট বেড়েছে। টিকা নিতে পারবেন এমন মানুষদের প্রায় অর্ধেক ইতোমধ্যে টিকা নিয়েছেন ইতালিতে।
সূত্র : সিবিএস নিউজ।
এনএফ