বিমান বাহিনীর হামলায় আফগানিস্তানের জাওজান ও হেলমান্দ প্রদেশে অন্তত ৩৩ তালেবান সদস্য নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও ১৭ জন। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে করা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া নিউজ।

শনিবার আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আগের দিন শুক্রবার জাওজান প্রদেশের রাজধানী শিবারঘানের নিকটবর্তী শহর মারঘাব ও হাসান তাব্বিনের তালেবান ঘাঁটিসমূহে হামলা চালিয়েছে বিমান বাহনী। এতে ১৯ জন তালেবান সদস্য নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১৫ জন।  

একই দিন দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হেলমান্দের রাজধানী লশকর গাহতে বিমান বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন ১৪ জন তালেবান সদস্য, আহত হয়েছেন আরও দুই জন।

এছাড়া এই হামলায় দুই প্রদেশের তালেবান ঘাঁটিসমূহের তিনটি ট্রাক, ছয়টি মোটর সাইকেল, দুইটি বাঙ্কার এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ ধ্বংস হয়েছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠী তালেবান সম্প্রতি পুরো আফগানিস্তান দখলের অভিযানে নেমেছে এবং তাদের এই অভিযানের কারণে আফগানিস্তানের সাধারণ নাগরিক ও দেশটিতে অবস্থানরত অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন।

তাই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিমান হামলা চালাতে বাধ্য হয়েছে আফগান সেনা বাহিনী।

চলতি বছর এপ্রিলে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন ও ন্যাটো সেনাদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ঘোষণায় তিনি বলেছিলেন- ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব মার্কিন ও ন্যাটো সেনাসদস্যকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। পরে এই সময়সীমাকে আরও এগিয়ে ৩১ আগস্ট করা হয়।

বাইডেনের এই ঘোষণার পর থেকেই নতুন উদ্যমে আফগানিস্তান পুনরায় নিজেদের দখলে নিয়ে আসার অভিযান শুরু তালেবান গোষ্ঠী।

ফলে, স্বাভাবিকভাবেই দেশটিতে ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে সহিংসতা ও প্রাণহানি, যা উদ্বেগ তৈরী করে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বরাজনীতিতে।

এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদর দফতর পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি জন কিরবি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, তালেবানদের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করতে আফগানিস্তান সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করছে মার্কিন সেনা সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে জন কিরবি বলেছিলেন, ‘আফগান সেনা বাহিনী এএনডিএসএফকে (আফগান ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি ফোর্স)  সহযোগিতা করতে আফগানিস্তানে তালেবান ঘাঁটিসমূহ লক্ষ্য করে বিমান হামলা পরিচালনা করছে মার্কিন সেনা সদস্যরা।’

তার আগের দিন বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফ মার্ক মিলি বুধবার বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছিলেন, আফগানিস্তানের ৩৪ টি প্রদেশের মধ্যে ১৭ টিতে সশস্ত্র তালেবান বিদ্রোহীদের চাপ বাড়ছে; এবং দ্রুত কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে পুরো আফগানিস্তান তারা দখল করে নেবে।

এএফপিকে মার্ক মিলি বলেছিলেন, ‘যে পর্ব আমরা শেষ করে এসেছি, সম্ভবত তার একটি নতুন অধ্যায় ফের আমাদের শুরু করতে হতে পারে।’

আফগানিস্তানের ৩১ প্রদেশে রাত্রিকালীন কারফিউ ঘোষণা

এদিকে, তালেবান সদস্যদের অগ্রযাত্রা রুখতে দেশের ৩৪ প্রদেশের ৩১ টিতে রাত্রিকালীণ কারফিউ ঘোষণা করেছে আফগানিস্তানের সরকার। শনিবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আফগানিস্তানে তালেবান সদস্যদের বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে কাবুল, পানশির ও নানগারহার- এই তিন প্রদেশ ব্যতীত বাকি ৩১ টিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাত্রিকালীন কারফিউ জারি থাকবে।’

আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আহমেদ জিয়া জিয়া এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্থানীয় সময় রাত ১০ টা থেকে ভোর ৪ টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে এই কারফিউ।   

সূত্র : সিনহুয়া নিউজ, এএনআই

এসএমডব্লিউ