ব্রেক্সিট চুক্তিতে পরিবর্তন চান জনসন
উত্তর আয়ারল্যান্ডকে ঘিরে ব্রিটেন আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ব্রেক্সিট চুক্তিতে পরিবর্তনের দাবি করেছেন। তবে ব্রাসেলস সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে।
দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়ার পর গত বছর ব্রেক্সিট কার্যকর হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে গেছে। কিন্তু সেই বিচ্ছেদের কালো ছায়া আবার নতুন করে সংঘাতের কারণ হয়ে উঠছে। নেপথ্যে রয়েছে উত্তর আয়ারল্যান্ড।
বিজ্ঞাপন
ইইউ জোটভুক্ত দেশ আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ব্রিটেনের একমাত্র স্থলসীমান্তে নিয়ন্ত্রণ এড়াতে ব্রেক্সিট চুক্তির মধ্যে বিশেষ ‘নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল’ ধারা রাখা হয়েছিল। এর আওতায় ব্রিটেনের সেই প্রদেশে ইইউ’র শুল্ক ও একক বাজারের নিয়ম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
বিভক্ত আইরিশ ভূখণ্ডের দুই অংশের মধ্যে শান্তি বজায় রাখতে এ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এতে করে উত্তর আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ব্রিটেনের বাকি অংশের মধ্যে কার্যত নতুন এক সীমা সৃষ্টি হয়েছে।
ব্রেক্সিট চুক্তি স্বাক্ষরের সময় সেই ধারাটিকেই ব্রিটেনের বড় সাফল্য হিসেবে তুলে ধরলেও এখন বেঁকে বসেছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি নতুন করে দরকষাকষি করতে ইইউ’র ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন।
বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন এবং জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে জনসন আবেদন-নিবেদন থেকে শুরু করে হুমকিও দিয়েছেন।
ফন ডেয়ার লাইয়েন নতুন করে ‘নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড প্রোটোকলে’ কোনোরকম পরিবর্তনের সম্ভাবনা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন। তবে সেই চুক্তির কাঠামোর মধ্যে ‘সৃজনশীল’ ও ‘নমনীয়’ কোনো সমাধানসূত্র নিয়ে আলোচনা করতে আপত্তি নেই তার।
তিনি উত্তর আয়ারল্যান্ডে স্থিতিশীলতার স্বার্থে এবং অনিশ্চয়তা এড়াতে উভয় পক্ষের অঙ্গীকারের ওপর জোর দেন। গত বুধবার জনসনের সরকার ‘নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড প্রোটোকলে’ পরিবর্তনের কিছু প্রস্তাব মেনে নেওয়ার জন্য ব্রাসেলসের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়েছিল।
ব্রেক্সিটের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ডেভিড ফ্রস্ট বলেন, বর্তমান বিধিনিয়মের কারণে উত্তর আয়ারল্যান্ডে শান্তি হুমকির মুখে পড়েছে। তাই ন্যায্য ও বাস্তবসম্মত সমাধানসূত্রের প্রয়োজন। তিনি প্রোটোকলের কিছু নিয়ম স্থগিত রেখে ‘চূড়ান্ত’ বোঝাপড়ার পক্ষে কথা বলেছেন।
গোটা ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ার সময় জনসন একাধিকবার বোঝাপড়ার শর্ত খেলাপ করে ব্রাসেলসে আস্থা হারিয়েছেন। সে কারণে ইইউ বাধ্য হয়ে ব্রিটেনের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ‘নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল’ নিয়ে নতুন সংঘাতের শঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
ব্রাসেলস অবশ্য মনে করিয়ে দিয়েছে ব্রিটেন এখনো এই চুক্তির সব শর্ত কার্যকর না করে বোঝাপড়া খেলাপ করছে। দেশটি আবার নতুন করে একতরফা পদক্ষেপ নিলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটতে পারে।
ইইউ আলোচনার দরজা একেবারে বন্ধ করে দিচ্ছে না। ইইউ’র এক মুখপাত্র বলেন, ব্রেক্সিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারোস সেফকোভিচ ডেভিড ফ্রস্টের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী। এখনো অবশ্য আলোচনার দিনক্ষণ স্থির হয়নি।
এএস