প্রবল বর্ষণ ও এর প্রভাবে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় জার্মানির দক্ষিণাঞ্চল ও বেলজিয়ামে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৮৩ জন, নিখোঁজ আছেন আরো অনেকে। রোববার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নদ-নদীর পানি উপচে জার্মানির রাইনল্যান্ড রাজ্যের পালাটিনেট, ওয়েস্টফালিয়া ও এবং এর সীমান্তবর্তী বেলজিয়ামে গত সপ্তাহের বুধবার থেকে শুরু হয় আকস্মিক বন্যা। বানের পানির টানে এই অঞ্চলসমূহে বাড়িঘর ধসে যায়, রাস্তাঘাট ভেঙে পড়ে এবং বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যায় বলে রোববারের প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আকস্মিক এই বানে সর্বশেষ ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল জার্মানির ব্যাভারিয়া প্রদেশের বারচেস্টগেডেনার জেলা। এই জেলাটির সঙ্গে অস্ট্রিয়ার সীমান্ত থাকায় অস্ট্রিয়ার কিছু অংশও বন্যা কবলিত হয়েছে।

অতিবৃষ্টি ও বন্যায় বাড়িঘর ধসে এ পর্যন্ত জার্মানিতে মারা গেছেন  ১৫৬ জন, এদের মধ্যে কোলন শহরের দক্ষিণে আরউইলার জেলায় প্রায় ১১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে শনিবার জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া বেলজিয়ামে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ২৭ জন।

কোলনের নিকটবর্তী বাসেনবার্গ শহরে একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর শুক্রবার রাতে স্থানীয় প্রায় ৭০০ বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে নগর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

ইউরোপের জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গত ৬০ বছরে ইউরোপে এত বড় ও বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যায়নি।

বন্যায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া বেশ কয়েকটি এলাকার কয়েকশ লোক এখনও নিখোঁজ আছেন। কিছু এলাকার সঙ্গে টেলিযোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে।

জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভল্টার স্টাইনমায়ার শনিবার অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য নর্থ রাইন-ভেস্টফালিয়া পরিদর্শন করেছেন। সেখানে বন্যায় অন্তত ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ মূল্যায়ন করতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে বলে প্রেসিডেন্ট স্টাইনমায়ার জানিয়েছেন। এসব ক্ষতি সারিয়ে তুলতে পুনর্নির্মাণে বেশ কয়েক বিলিয়ন ইউরোর তহবিল দরকার হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে, জার্মানির ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাসমূহে তাৎক্ষণিক ত্রাণ সহযোগিতা হিসেবে ৩০ কোটি ইউরো দেওয়া হবে বলে রোববার ঘোষণা করেছেন জার্মানির অর্থমন্ত্রী ওলাফ স্কোলজ। পাশাপাশি সেসব অঞ্চলের,সড়ক, সেতু ও বাসিন্দাদের বাড়িঘরও সরকারের উদ্যোগে মেরামত করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

ঘোষণায় তিনি বলেন, ‘এই ভয়াবহ দুর্যোগে যারা বাড়িঘর, কর্মক্ষেত্র হারিয়েছেন- কোনো প্রকার সহযোগিতা ছাড়া তাদের পক্ষে এ ক্ষয়ক্ষতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।’

বন্যায় জার্মানির রাইনল্যান্ড পালাটিনেট এবং নর্থ রাইন-ভেস্টফালিয়া রাজ্য এবং বেলজিয়ামের পূর্বাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বেশ কয়েকদিন ধরে পুরো অঞ্চলের জনবসতিগুলো বিদ্যুৎবিহীন ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

এছাড়া, জার্মানি ও বেলজিয়ামের ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকায় ইতোমধ্যে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, তারা এ সমস্যা সম্পর্কে সচেতন এবং ইতোমধ্যে উপদ্রুত এলাকাগুলোতে সুপেয় পানি সরবরাহে কাজ শুরু হয়েছে।

সূত্র : রয়টার্স

এসএমডব্লিউ