অক্সফোর্ড টিকার দাম চূড়ান্ত ভারতে, প্রতি ডোজ ২৩২ টাকা
• অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের দাম চূড়ান্ত করেছে ভারত
• ভারত সরকারকে সোমবার রাত অথবা মঙ্গলবার সকালে টিকা সরবরাহ করবে সেরাম
• ১৬ জানুয়ারি ভারতে টিকাদান শুরুর পরিকল্পনা
• সেরামে উৎপাদিত টিকার রফতানি শুরু হবে ১৬ জানুয়ারির পর
ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার উৎপাদিত কোভিশিল্ড নামের যে টিকা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট তৈরি করবে; তার প্রত্যেকটি ডোজের দাম পড়বে মাত্র ২০০ রুপি (বাংলাদেশি ২৩২ টাকা ২৩ পয়সা)। দেশটির সরকারের সঙ্গে সেরামের এক চুক্তিতে এই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে এনডিটিভি।
বিজ্ঞাপন
সেরাম ইনস্টিটিউট বলছে, কোভিশিল্ডের প্রথম ১০ কোটির মধ্যে প্রত্যেক ডোজের দাম পড়বে ২০০ রুপি। প্রথম দফায় এক কোটি ১০ লাখ ডোজ সরবরাহ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম এই ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।
দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রের পুনে শহরে অবস্থিত সেরাম ইনস্টিটিউট সোমবার রাতে অথবা মঙ্গলবার সকালে ভ্যাকসিনের প্রথম চালান সরবরাহ করতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
সেরাম ইনস্টিটিউটের সূত্রগুলো বলছে, ভ্যাকসিনের দাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রথম চালানের সরবরাহ ভারত সরকারকে আজ অথবা আগামীকালের মধ্যে বুঝে দেয়া হলেও জীবন-রক্ষাকারী এই ভ্যাকসিনের রফতানি শুরু হবে ১৬ জানুয়ারির পর।
সেরামের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রত্যেক সপ্তাহে কয়েক মিলিয়ন করে কোভিশিল্ডের ডোজ সরবরাহ করা হবে। তবে প্রথম ধাপে এক কোটি ১০ লাখ ডোজ সরবরাহ হবে।
গত সপ্তাহে ভারতের ক্ষমতাসীন সরকার দেশটিতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন প্রয়োগের প্রক্রিয়া আগামী ১৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে বলে ঘোষণা দেয়।
চলতি মাসের শুরুর দিকে হায়দরাবাদভিত্তিক স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেকের তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ‘কোভ্যাক্সিন’ এবং অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কোভিশিল্ড’র অনুমোদন দেয় দেশটির সরকার।
ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে এই ভ্যাকসিন সহজলভ্য হলে তখন প্রত্যেক ডোজের দাম পড়বে এক হাজার রুপি।
সেরামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদর পুনাওয়ালা
ভারতের ক্ষমতাসীন সরকার প্রথম দফায় মহামারি মোকাবিলায় নিয়োজিত দেশটির সম্মুখসারির স্বাস্থ্য কর্মী, পুলিশ, ৫০ বছরের বেশি বয়সী এবং অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্তদের ভ্যাকসিন প্রয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
প্রথম দফার এই কর্মসূচিতে ৩০ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে দেশটির সরকার। এতে ৬০ কোটি ডোজের দরকার হবে। তাৎক্ষণিকভাবে বিতরণের জন্য বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী সেরাম ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে ৫ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন মজুদ করেছে।
সেরামের উৎপাদিত ভ্যাকসিনের রফতানিতে কোনও ধরনের নিষেধাজ্ঞা নেই বলে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার জানালেও রফতানির জন্য এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক সময় ঘোষণা করেনি। ভারতে তৈরি করোনাভাইরাসের এই ভ্যাকসিন নিতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ, ব্রাজিল-সহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ সেরামের সঙ্গে চুক্তি করেছে।
করোনার উত্থান এবং বৈশ্বিক মহামারি
• ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়
• চীনে করোনায় প্রথম প্রাণহানি ঘটে ৯ জানুয়ারি
• ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে
• এই ভাইরাসে বিশ্বে প্রথম প্রাণহানি ঘটে ২ জানুয়ারি ফিলিপাইনে
• ১১ মার্চ ‘করোনা মহামারি’ ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ভারতে গণহারে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলে চাহিদার ৯০ শতাংশই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন পূরণ করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
২৫ জানুয়ারির মধ্যেই বাংলাদেশে আসবে সেরামের টিকা
এদিকে, সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম বলেছেন, সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে চলতি (জানুয়ারি) মাসের ২১ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যেই দেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আসবে।
তিনি বলেছেন, সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চুক্তি হয়েছে। বেক্সিমকো আমাদের জানিয়েছে, সেরাম ইনস্টিটিউট আমাদের ভ্যাকসিন দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ২১ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যেই আমরা ভ্যাকসিন পেয়ে যাব।
এর আগে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের বরাত দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এটা কো-অর্ডিনেট করছেন। আজকে হয়তো ওনারা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন।’
ভ্যাকসিন কবে আসবে- জবাবে তিনি বলেন, ‘এ মাসের মধ্যেই চলে আসবে, এটা আজকে মিটিংয়ে বলা হয়েছে। কিন্তু যেহেতু জিনিসটা ফাইনাল হয়নি... তিনি বলেছেন যে, আশা করছি এ মাসের শেষের দিকেই চলে আসবে।’
অন্যদিকে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ২২ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৮০৩ জনে। এ সময়ে নতুন করে ৮৪৯ জনের শরীরে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ২৩ হাজার ৩০২ জনে পৌঁছেছে।
করোনার বৈশ্বিক চিত্র
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবার বিক্রির বাজার থেকে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকে এই ভাইরাস বিশ্বের ২১৮টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯ কোটি ৭ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি এবং মৃত্যু ছাড়িয়েছে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয়, তৃতীয় ঢেউয়ে বিশ্ব যখন ধুঁকছে; তখন অন্তত ৬০টি ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপে রয়েছে। এরমধ্যে ব্রিটেনের অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড, মার্কিন ফাইজার ও জার্মানির বায়োএনটেক, মার্কিন মডার্না, রাশিয়ার স্পুটনিক-৫ ও চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিনও রয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি, রয়টার্স।
এসএস