হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোয়েসের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন কলম্বিয়ান নাগরিক ‘যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষামূলক কর্মসূচিতে’ অংশ নিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের একজন মুখপাত্র মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পেন্টাগনের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল কেন হফম্যান জানান, যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক প্রশিক্ষণের বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত পর্যালোচনার সময় এই তথ্যটি জানা যায়। তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযুক্ত কলম্বিয়ান নাগরিকরা কখন বা কোথায় সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানাননি তিনি।

হফম্যান বলেন, ‘আমাদের পর্যালোচনা চলছে, এই মুহূর্তে আমাদের কাছে অতিরিক্ত কোনো তথ্য নেই।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট প্রথম এই প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত সংবাদটি প্রকাশ করে।

পেন্টাগনের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিবছর দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান থেকে কয়েক হাজার সামরিক ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

হফম্যান বলেন, এই প্রশিক্ষণে প্রধানত ‘মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা, আইনের শাসনের অনুবর্তিতা এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বেসামরিক সরকারের অধীনে সামরিক বাহিনীর অবস্থানের ওপর’ জোর দেওয়া হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য, গত ৭ জুলাই বন্দুকধারীরা হাইতির প্রেসিডেন্ট মোয়েসের ব্যক্তিগত বাড়িতে হামলা চালায় এবং গুলি করে হত্যা করে। এ হামলায় তার স্ত্রী ও দেশের ফার্স্ট লেডি মার্টিন মোয়েস আহত হন। পরে দ্রুত তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মিয়ামিতে নেওয়া হয়। তবে তিনি অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

হাইতির অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী ক্লড জোসেফ সাংবাদিকদের বলেনম তিনি একাধিকবার মার্টিন মোয়েসের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তিনি ভালো আছেন।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার হাইতির পুলিশ প্রধান লিওন চার্লস এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোয়েসেকে নিজ বাড়িতে গুলি চালিয়ে হত্যায় ২৮ জন জড়িত এবং এর বেশিরভাগই কলম্বিয়ার সাবেক সেনা।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, অভিযুক্ত ২৮ জনের মধ্যে ২৬ জন কলম্বিয়ান এবং ২ জন হাইতি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। এর মধ্যে ২ জন মার্কিন নাগরিকসহ ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে এবং ৮ জন সন্দেহভাজন পলাতক আছেন। এছাড়া বাকি অভিযুক্তরা রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্সে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন বলেও লিওন চার্লস।

২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশটিতে তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়েছিলেন জোভেনেল মোয়েসে। প্রেসিডেন্ট মোয়েস দেশটিতে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন বলে চলতি বছর বিরোধীদলগুলো অভিযোগ তোলে। যদিও মোয়েস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।

১৮০৪ সালে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের প্রথম স্বাধীন দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয় হাইতি। দেশটি প্রথমে স্পেনীয় ও পরে ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। ফরাসি ঔপনিবেশিকদের উৎখাত করে বিশ্বে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত হয় দেশটিতে।

স্বাধীন হলেও বিগত দুই শতাব্দী ধরে দেশটি একের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা, সহিংসতা, আগ্রাসন আর দমনপীড়নের মধ্য দিয়ে গেছে। এর মধ্যে পরিবারতান্ত্রিক দুভেলিয়ারদের স্বৈরতান্ত্রিক কর্তৃত্বাবাদী শাসনের শিকারও হয়েছে দেশটির মানুষ।

টিএম