তালেবানের শাসনের ভয়ে যখন হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যাচ্ছেন তখন এই জঙ্গিগোষ্ঠীর জ্যেষ্ঠ একজন নেতা বলেছেন, আফগানিস্তানের শহরগুলোর ভেতরে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়তে চায় না তালেবান।

মঙ্গলবার তালেবানের মুখপাত্র আমির খান মুত্তাকি এক টুইট বার্তায় বলেছেন, বর্তমানে লড়াই পার্বত্য ও মরু অঞ্চল থেকে শহরগুলোর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। তালেবানের যোদ্ধারা শহরের ভেতরে লড়াই করতে চান না।

তালেবানের এই মুখপাত্র বলেছেন, শহরগুলোর ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে যেকোনও চ্যানেল ব্যবহার করে একটি যৌক্তিক চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আমাদের আমন্ত্রণ এবং পরিচালনা কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করাই উত্তম।

পৃথক এক বিবৃতিতে আফগান এই সশস্ত্র গোষ্ঠী বলেছে, মার্কিন সৈন্যরা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর কাবুল বিমানবন্দরে নিরাপত্তা দিতে তুরস্কের নেওয়া সিদ্ধান্ত অত্যন্ত নিন্দনীয়। বিমানবন্দরের সুরক্ষায় নিরাপত্তা সহায়তা দিতে ওয়াশিংটনের কাছে তুরস্ক রাজি হওয়ার কয়েকদিন পর তালেবান বলছে, এই সিদ্ধান্ত অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং আমাদের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও জাতীয় স্বার্থের লঙ্ঘন।

এদিকে, গত ১৫ দিন ধরে তালেবানের ক্রমবর্ধমান অভিযানের মুখে আফগানিস্তানের ৫ হাজার ৬০০টিরও বেশি পরিবার তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন; যাদের বেশিরভাগই দেশটির উত্তরাঞ্চলের বলে সরকারের শরণার্থী এবং পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক বাহিনীর সঙ্গে গত ২০ বছরের যুদ্ধের পরও জাতিগত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে শক্ত ঘাঁটি গড়তে সক্ষম হয় তালেবান। 

মঙ্গলবার মার্কিন বার্তাসংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তালেবানের সাক্ষরিত এক চুক্তিতে বলা হয়েছিল, তালেবানের যোদ্ধারা প্রাদেশিক রাজধানীগুলোর দখল নেবে না। কিন্তু বর্তমানে দেশটির দক্ষিণের কান্দাহার এবং উত্তরের বাদঘিসের রাজধানী দখলে নিয়েছে তালেবান।

আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে জানায়, তালেবানের আক্রমণের শঙ্কায় রাজধানী কাবুলের আশপাশে রকেট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। তবে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উৎস এবং ব্যয়ের ব্যাপারে কোনও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তানের নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। বলেন, দশকের পর দশকের লড়াইয়ের অবসান আনার দায়িত্ব আফগান কর্তৃপক্ষের।

দুই দশকের লড়াইয়ের পর যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রায় ৯০ শতাংশ সদস্য ইতোমধ্যে আফগান ছেড়েছে। আফগানিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল স্কট মিলার তার দায়িত্ব হস্তান্তর করে কাবুল ছেড়েছেন। ‌‘চিরকালীন যুদ্ধের’ অবসানের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে ওয়াশিংটন।

এসএস