করোনা টিকা কোভ্যাক্সিন ক্রয় বিষয়ক দুর্নীতিতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকে বিচারের কাঠগড়ায় দেখতে চান অর্ধেকেরও বেশি ব্রাজিলীয়। দেশটির রাজনৈতিক জরিপ সংস্থা ডাটাফোলহার সাম্প্রতিক এক জরিপে এ তথ্য এসেছে।

বৃহস্পতিবার জরিপের ফল সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। সেখানে দেখা গেছে, ৫৪ শতাংশ ব্রাজিলীয় বলসোনারোর অভিশংসন চান এবং ৫১ শতাংশ মনে করেন, বলসোনেরোর পদত্যাগ করা উচিত।

জরিপের এই ফলাফলকে ২০১৯ সালে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত বলসোনারোর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে দেখছেন দেশটির রাজনীতি বিশ্লেষকরা।

সম্প্রতি কোভ্যাক্সিন দুর্নীতি নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে ব্রাজিলের রাজনৈতিক অঙ্গন। অভিযোগ উঠেছে- করোনা টিকা কোভ্যাক্সিনের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেকের সঙ্গে ব্রাজিল সরকারের টিকা ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তিপত্রে প্রতি ডোজ টিকার যে দাম ধরা হয়েছিল, বাস্তবে তারচেয়ে বেশি দামে সেই ডোজসমূহ কেনা হয়েছে।

অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ মেলায় গত জুনে ভারত বায়োটেকের সঙ্গে কোভ্যাক্সিনের ডোজ ক্রয় সংক্রান্ত ৩০ কোটি ৪০ লাখ ডলারের চুক্তি স্থগিত করেছে ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের একাধিক সদস্যের দাবি, প্রেসিডেন্ট বলসোনারো নিজে এবং তার অনুগত কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত বলে তথ্য রয়েছে।

ভারত বায়োটেকের সঙ্গে করা সেই চুক্তিতে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সরাসরি কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। বলসোনারো ও তার অনুগত মন্ত্রী-এমপি ও কর্মকর্তারাই ব্রাজিল সরকারের পক্ষে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন।

দুর্নতির এই অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা হিসেবে ব্রাজিলের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ থেকে তোলা অভিশংসনের দাবি থাকা সত্ত্বেও এতদিন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেট।

অবশেষে, গত সপ্তাহে ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।

ব্রাজিলের কট্টর ডানপন্থি ঘরানার প্রেসিডেন্ট বলসোনারো অবশ্য বরাবরই তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। শনিবার এক সাক্ষাৎকারেও এ বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি বলেছেন- তার সরকার এই অভিযোগ খতিয়ে দেখবে।

করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বের যেসব দেশে সর্বোচ্চসংখ্যক আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে দ্বিতীয় শীর্ষস্থানে আছে ব্রাজিল। মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৯০ লাখ ৬৯ হাজার ৩ জন এবং মারা গেছেন মোট ৫ লাখ ৩২ হাজার ৯৪৯ জন। দেশটিতে বর্তমানে সক্রিয় করোনা রোগী আছেন ১০ লাখ ৫ হাজার ৬৮৫ জন।

ব্রাজিলের এই করোনা বিপর্যয়ের জন্য দেশটির রাজনীতি বিশ্লেষকদের অনেকেই বলসোনারোকে দায়ী করেন। কারণ, বলসোনারো বরাবরই লকডাউন ও করোনা বিধিনিষেধ আরোপের ঘোর বিরোধী হিসেবে পরিচিত। এ বিষয়ে তার যুক্তি- লকডাউন ও করোনা বিধিনিষেধ দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।

করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারেও ব্যাপক উদাসীনতা দেখিয়েছেন বলসোনারো। জনগণকে এ বিষয়ে উৎসাহিত করা তো দূর, তার নিজের বিরুদ্ধেই একাধিকবার স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।

করোনা মোকাবেলায় ব্যর্থতার কারণে এমনিতেই দেশে বলসোনারোর জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছিল। তার ওপর আদালতের তদন্তে যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন- সেটি তার রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বড় আঘাত হবে বলে মনে করছেন দেশের রাজনীতি বিশ্লেষকরা।

সূত্র : রয়টার্স

এএমডব্লিউ