প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোয়েসের সঙ্গে স্ত্রী মার্টিন মোয়েস। ২০১৭ সালের ছবি

হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোয়েসেকে হত্যার সময় গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন তার বিধবা স্ত্রী ও দেশটির সাবেক ফার্স্ট লেডি মার্টিন মোয়েস। গত বুধবার বন্দুকধারীরা প্রেসিডেন্ট মোয়েসকে তার নিজ বাড়িতে হত্যা করে। সেসময় হামলায় তার স্ত্রী মার্টিন মোয়েস আহত হন। এরপর ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে শনিবার একথা বলেন তিনি।

হামলায় আহত হওয়ার পর মার্টিন মোয়েসকে দ্রুত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মিয়ামিতে নেওয়া হয়। তবে তিনি শঙ্কামুক্ত আছেন বলে আগেই জানানো হয়েছিল। শনিবার তিনি জানান, গভীর রাতে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তার স্বামী হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোয়েসেকে গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেয়।

স্থানীয় সময় শনিবার নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে একটি ভয়েজ ম্যাসেজ পোস্ট করেন মার্টিন মোয়েস। সেখানে তিনি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন। টুইটারে পোস্ট করা ভয়েজ ম্যাসেজটি প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোয়েসের স্ত্রীর বলে অনেকে নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

মার্টিন মোয়েস বলছেন, হামলার এই ঘটনাটি এতোটাই দ্রুত ঘটেছিল যে, তার স্বামী একটি কথা বলারও সুযোগ পাননি। টুইটারে পোস্ট করা ওই রেকর্ডিংয়ে তিনি বলেন, ‘সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ঘরে প্রবেশ করার পর চোখের পলকে তার স্বামীকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয়।’

তিনি বলেন, ‘এই ধরনের কর্মকাণ্ড বর্ণনাতীত। কারণ জোভেনেল মোয়েসের মতো একজন প্রেসিডেন্টকে হত্যা করতে হলে তাকে সীমাহীন খারাপ অপরাধী হতে হয়। এমনকি হত্যার আগে তাকে একটি শব্দও উচ্চারণ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি।’

মার্টিন মোয়েসের দাবি, রাজনৈতিক কারণেই তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। বিশেষভাবে তিনি সংবিধানে একটি সংশোধনী আনতে চাচ্ছিলেন, যার ফলে প্রেসিডেন্টের হাতে আরও ক্ষমতা চলে আসতো। তার মতে, অজ্ঞাত মানুষেরা প্রেসিডেন্টের স্বপ্নকে শেষ করতে চেয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কাঁদছি, এটা সত্য। তবে আমার দেশকে আমরা এভাবে হারিতে যেতে দিতে পারি না। আমার স্বামী প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোয়েসের রক্তকে আমরা বৃথা যেতে দিতে পারি না। আমরা তাকে খুব ভালোবাসতাম এবং তিনিও আমাদেরকে ভালোবাসতেন।’

২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশটিতে তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়েছিলেন জোভেনেল মোয়েসে। প্রেসিডেন্ট মোয়েস দেশটিতে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন বলে চলতি বছর বিরোধীদলগুলো অভিযোগ তোলে। যদিও মোয়েস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।

উল্লেখ্য, ১৮০৪ সালে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের প্রথম স্বাধীন দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয় হাইতি। দেশটি প্রথমে স্পেনীয় ও পরে ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। ফরাসি ঔপনিবেশিকদের উৎখাত করে বিশ্বে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত হয় দেশটিতে।

স্বাধীন হলেও বিগত দুই শতাব্দী ধরে দেশটি একের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা, সহিংসতা, আগ্রাসন আর দমনপীড়নের মধ্য দিয়ে গেছে। এর মধ্যে পরিবারতান্ত্রিক দুভেলিয়ারদের স্বৈরতান্ত্রিক কর্তৃত্বাবাদী শাসনের শিকারও হয়েছে দেশটির মানুষ।

টিএম