একদিকে যখন অনেক ধনী দেশ করোনাভাইরাস মহামারির বিধি-নিষেধ শিথিল করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এই মহামারির সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়ের মুখোমুখি হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, মহামারির এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে প্রাণহানির সংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়িয়েছে বুধবার।

জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক এই সংস্থা বলছে, বর্তমানে করোনা মহামারির বৈশ্বিক ‘হটস্পটে’ পরিণত হয়েছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটির হাসপাতালগুলো করোনা রোগীদের ফেরত পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে। বুধবারও দেশটিতে রেকর্ড ১ হাজার ৪০ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনা।

করোনায় ৪০ লাখ মানুষের প্রাণহানির তথ্য জানিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেছেন, ‌‘এই মহামারির বিপজ্জনক এক সময়ে রয়েছে বিশ্ব।’

তিনি বলেছেন, কিছু দেশ উচ্চহারে টিকাদানের মাধ্যমে স্বস্তিতে রয়েছে। কিন্তু তারা এমন ভাব করছে যেন মহামারি ফুরিয়ে গেছে। কিন্তু অতি-সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট ও ভ্যাকসিনপ্রাপ্তির ‘মর্মান্তিক বৈষম্যের’ কারণে অন্যান্য দেশে সংক্রমণ তীব্র হয়েছে। 
 
ইন্দোনেশিয়া এই মুহূর্তে মহামারির সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। কিছুদিন আগে রাজধানী জাকার্তাসহ অন্যান্য কিছু শহরে বিধি-নিষেধ শিথিলের পর পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বর্তমানে দেশজুড়ে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে ইন্দোনেশিয়ার সরকার। 

দেশটির জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী আরল্যাঙ্গা হার্তার্তো বলেছেন, আমাদের হাসপাতালগুলোর সহজলভ্যতার দিকে মনযোগ দেওয়া দরকার।

ভারতে শনাক্ত হওয়া করোনার অতি-সংক্রামক ধরন ডেল্টার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়া অস্ট্রেলিয়া নতুন করে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। দেশটির ৫০ লাখের বেশি মানুষের বৃহত্তম শহর সিডনিতে লকডাউন জারি রয়েছে। বুধবার এই লকডাউনের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহের জন্য বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। মহামারির কারণে এক বছর পিছিয়ে শুরু হতে যাওয়া টোকিও অলিম্পিক ঘিরে জাপান সরকারও ব্যাপক বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। 

এই মহামারিতে এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ কোটি ৫৫ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষ। বৈশ্বিক হিসেবে করোনায় সর্বাধিক ৬ লাখ ২১ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। একই সঙ্গে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ কোটি ৪৬ লাখ ২২ হাজারের বেশি। এছাড়া লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের হিসেবে তৃতীয় স্থানে থাকলেও মৃত্যুর সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাস প্রাণ কেড়েছে ৫ লাখ ২৭ হাজারের বেশি এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৮৮ লাখ ৫৫ হাজার ১৫ জন।

করোনায় আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত। আর মৃতের সংখ্যায় বিশ্বে দেশটির অবস্থান তৃতীয়। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ৯৩০ জন এবং নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩ হাজার ৯৫৭ জন। দেশটিতে মোট আক্রান্ত ৩ কোটি ৬ লাখ ৬২ হাজার ৮৯৬ জন এবং মারা গেছেন ৪ লাখ ৪ হাজার ২৪০ জন।

এছাড়া এখন পর্যন্ত ফ্রান্সে ৫৭ লাখ ৯০ হাজার ৫৮৪ জন, রাশিয়ায় ৫৬ লাখ ৫৮ হাজার ৬৭২ জন, যুক্তরাজ্যে ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৮৬৮ জন, ইতালিতে ৪২ লাখ ৬৪ হাজার ৭০৪ জন, তুরস্কে ৫৪ লাখ ৫৪ হাজার ৭৬৩ জন, স্পেনে ৩৮ লাখ ৮০ হাজার ৬১২ জন, জার্মানিতে ৩৭ লাখ ৩৯ হাজার ৫৫৫ জন এবং মেক্সিকোতে ২৫ লাখ ৪১ হাজার ৮৭৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

অন্যদিকে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ফ্রান্সে এক লাখ ১১ হাজার ২৩১ জন, রাশিয়ায় এক লাখ ৩৯ হাজার ৩১৬ জন, যুক্তরাজ্যে এক লাখ ২৮ হাজার ২৬৮ জন, ইতালিতে এক লাখ ২৭ হাজার ৭০৪ জন, তুরস্কে ৪৯ হাজার ৯৯৬ জন, স্পেনে ৮০ হাজার ৯৫২ জন, জার্মানিতে ৯১ হাজার ৬৩০ জন এবং মেক্সিকোতে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮৯ জন মারা গেছেন।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবার বিক্রির বাজারে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। চীনের গণ্ডি পেরিয়ে দ্রুতগতিতে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় পরের বছরের ১১ মার্চ করোনা প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস।

বৈশ্বিক এই মহামারি মোকাবিলায় নজিরবিহীন গতিতে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রচেষ্টা চালান বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার বিজ্ঞানীরা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর বিশ্বজুড়ে প্রয়োগও শুরু হয়েছে। 

বুধবার ব্লুমবার্গের ভ্যাকসিন ট্র্যাকার বলছে, ইতোমধ্যে বিশ্বের ১৮০টি দেশে ৩২৬ কোটি ডোজ করোনা টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। 

এসএস