করোনায় গুরুতর অসুস্থ রোগীদের ব্যবহারের জন্য ইনটারলিউকিন-৬ গ্রুপের ২ টি ওষুধের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ওষুধ দু’টি হলো টোসিলিজুমাব ও সেরিলোমাব।

মঙ্গলবার এ বিষয়ক একটি বিবৃতি দিয়েছে ডব্লিউএইচও। সেখানে বলা হয়েছে, ২৭ দফায় ১০ হাজার গুরুতর অসুস্থ রোগীর ওপর এই ওষুধ প্রয়োগের পর প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

ডব্লিউএইচওর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, করোনায় গুরুতর অসুস্থ কিংবা মৃত্যুঝুঁকিতে থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে এই দুটি ওষুধ ‘অত্যন্ত কার্যকর’ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। গুরুতর অসুস্থ ১০০০ রোগীর ওপর এই ওষুধ দু’টির কোনো একটি প্রয়োগ করে দেখা গেছে – মাত্র ১৫ জন ব্যতীত সবারই শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটেছে।

অন্যদিকে, গুরুতর অসুস্থ হয়ে মৃত্যুঝুঁকিতে থাকা ১০০০ রোগীর ওপর এই দু’টি ওষুধের কোনো একটি প্রয়োগ করে দেখা গেছে, ২৮ জন ছাড়া অন্য সব রোগীর মৃত্যুঝুঁকি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে।

ডব্লিউএইচও-এর প্রধান নির্বাহী তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস মঙ্গলবারের বিবৃতিতে বলেন, ‘করোনা গুরুতর অসুস্থ ও জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা রোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য এই দুই ওষুধ নতুন আশা নিয়ে হাজির হয়েছে।’

টোসিলিজুমাব ও সেরিলোমাব- দুটি ওষুধের কাজ হলো মানবদেহে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির (এমএবি) পরিমাণ বাড়ানো। এ কারণে এই ওষুধ দু’টিকে এমএবি ড্রাগসও বলা হয়। আরথ্রাইটিস, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় এই ওষুধ দুটি ব্যবহৃত হয় বিশ্বজুড়ে।

ইউরোপের অন্যতম ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট হিসেবে পরিচিত সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ওষুধ কোম্পানি ‘রোচে/রোশে’ টোসিলিজুমাবের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। ইউরোপের বাজারে এই ওষুধটির ব্র্যান্ডনাম অ্যাকটেমরা।

অন্যদিকে, সেরিলোমাব ওষুধটি যৌথভাবে প্রস্তুত করেছে মার্কিন ওষুধ কোম্পানি রিজেনেরন ও ফ্রান্সের ওষুধ কোম্পানি সানোফি। আন্তর্জাতিক বাজারে এই ওষুধটির ব্র্যান্ডনাম কেভজারা।

আন্তর্জাতিক বাজারে এমএমবি ড্রাগস হিসেবে পরিচিত ওষুধসমূহের দাম সবসময়েই চড়া। অ্যাকটেমরা নামের ৬০০ মিলিগ্রামের এক শিশি টোসিলিজুমাবের দাম অস্ট্রেলিয়ায় ৪১০ ডলার, ভারতে ৬৪৬ ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৩ হাজার ৬২৫ ডলার।

কেভজারা ব্র্যান্ডনামের সেরিলোমাবের দাম এত চড়া না হলেও এখন পর্যন্ত এই ওষুধটিও নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশসমূহে বসবাস করা অনেকেরই নাগালের বাইরে।

ডব্লিউএইচও-এর অনুমোদনের পর এই ওষুধ দু’টির দাম কমানোর আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (এমএসএফ)। ফ্রান্সভিত্তিক এই সংগঠনটির সদস্য জুলিয়েন পোটেট এক বিবৃতিতে এ সম্পর্কে বলেন, ‘এই দুই ওষুধ ইতোমধ্যে করোনায় গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসায় কার্যকর বলে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ডব্লিউএইচও। পুরো বিশ্ব আজ মহামারির ভয়াবহ বিপর্যয়ে ধুঁকছে। ওষুধ দু’টির দাম যেন সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে রাখা যায়, সেজন্য প্রস্তুতকারক কোম্পানিসমূহকে আহ্বান জানাচ্ছে এমএসএফ।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকেও একই আহ্বান জানিয়ে পৃথক একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে সংস্থার প্রধান নির্বাহী তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেছেন, ‘দামের বিষয়টি বিবেচনা করলে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশসমূহের মানুষের কাছে এই দু’টি ওষুধ এখনও নাগালের বাইরে।’

‘করোনা টিকার অসম বিতরণের ফলে বর্তমানে বিশ্বের দরিদ্র ও উন্নয়নশীল অনেক দেশে টিকার গুরুতর ঘাটতি চলছে। টিকার ডোজের স্বল্পতার কারণে সেসব দেশে গুরুতর অসুস্থ ও মৃত্যুর হারও বেশি। ফলে এ ওষুধগুলো মূলত প্রয়োজন সেসব দেশের জনগণের এবং এটি বিবেচনা করেই এই ওষুধ দুটির দাম পুন নির্ধারণে প্রস্তুতাকারী কোম্পানিগুলোকে আহ্বান জানানো হচ্ছে।’

করোনায় গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসায় এই নিয়ে দ্বিতীয় দফায় ওষুধের অনুমোদন দিল ডব্লিউএইচও। এর আগে করোনা চিকিৎসায় স্টেরয়েড ওষুধ ডেক্সোমেথাসনের অনুমোদন দিয়েছিল সংস্থা।

সূত্র : আলজাজিরা

এসএমডব্লিউ