দীর্ঘ দুই দশক ধরে বাগরাম বিমানঘাঁটি ছিল আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের সদর দফতর। ইতোমেধ্যেই সেখান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছে ওয়াশিংটন। সেখানে এখন পড়ে আছে মার্কিন সেনাদের কয়েক টন আবর্জনার স্তূপ।

যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের রাজনীতির জন্য কী ধরনের ভবিষ্যত রেখে যাচ্ছে সেটি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে দেশটি ছাড়ার আগে সেনারা যে তাদের ব্যবহৃত বিশাল আবজর্নার স্তূপ রেখে যাচ্ছে, তার ছবি ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইনে। বাইডেনের ঘোষিত সময়সীমার ১১ সপ্তাহ আগেই বাগরাম বিমানঘাঁটি থেকে সেনা সরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন সেখানে শুধুই ময়লার স্তূপ।

২০০১ সাল থেকে বাগরামে যুক্তরাষ্ট্রের এক লাখের বেশি সেনা দায়িত্ব পালন করেছেন। কাবুল থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকাটি রীতিমতো একটি ছোটখাটো মার্কিন শহরে পরিণত হয়েছিল। গড়ে উঠেছিল শপিং সেন্টার, ফাস্টফুডের দোকানও। যাওয়ার সময় মার্কিন সেনারা দরকারি সরঞ্জামগুলো সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে অথবা স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করছে। কিন্তু ফেলে যাচ্ছে বিপুল আবর্জনা, প্যাকেজিং ও ইলেকট্রনিক বর্জ্য।

ঘাঁটির বাইরে ফেলনার এই ভাগাড় অবশ্য স্থানীয় মানুষের মধ্যে বিপুল কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। তাদের চোখ তন্ন তন্ন করে খুঁজে বেড়াচ্ছে যদি মূল্যবান কিছু মিলে! যেমন সেখানে এক জোড়া সামরিক বুট খুঁজে পেয়েছেন এক ব্যক্তি। আবর্জনা থেকে খুঁজে পাওয়া উপকরণ বিক্রি করে অনেকে অর্থ আয়েরও চেষ্টা করছেন।

এই স্তূপের একটি বড় অংশই ইলেকট্রনিক বর্জ্য। সেখানে সার্কিট বোর্ড, স্ক্রু থেকে শুরু করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্থানীয়রা। এগুলোর কোনো কোনোটিতে এমনকি তামা, সোনার মতো মূল্যবান ধাতুও রয়েছে। এখান থেকে যদি ৫০০ ডলার আয়ের ব্যবস্থাও হয় তাও রীতিমত সম্পদের খনি আফগানদের জন্য।

হিন্দুকুশ পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত বাগরামের সামরিক ঘাঁটি হিসেবে রয়েছে দীর্ঘ এতিহ্য। ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তান দখলের পর সোভিয়েত সেনারাও সেটিকে ব্যবহার করেছিল। অনেকেরই এখন আশঙ্কা ঘাঁটিটি তালেবানরা দখল করে নিলে সেটি তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বিজয় হিসেবে বিবেচিত হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চলতি বছর ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই সেখান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে ১ মে থেকে আফগানিস্তান ছাড়তে শুরু করেছে মার্কিন সেনারা। তবে তালেবানদের সম্ভাব্য হামলা মোকাবিলায় ভারি অস্ত্রসহ একটি বাড়তি দলকে সেখানে মজুদ রাখা হয়েছে। ন্যাটো ও অংশীদার রাষ্ট্রগুলোর ৩৬টি মিশন এখনও সেখানে আছে।

নিজেদের ব্যবহৃত বুট আর আবর্জনা ছাড়া আফগানিস্তানকে আর কী দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র? মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনিকে আশ্বাস দিয়েছেন টেকসই সম্পর্ক গড়ে তেলার। তার রূপরেখা কী হবে কিংবা কতটা কার্যকর থাকবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

সূত্র: ডয়চে ভেলে

টিএম