করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় ইন্দোনেশিয়াকে মডার্নার ৪০ লাখ ডোজ কোভিড-১৯ টিকা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে একথা জানিয়েছেন বলে শনিবার (৩ জুলাই) এ খবর দিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত দেশগুলোর অন্যতম ইন্দোনেশিয়া। সাম্প্রতিক সময়ে ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশটিতে শনিবার (৩ জুলাই) থেকে শুরু হয়েছে জরুরি লকডাউন। এই পরিস্থিতিতে দেশটিকে করোনা টিকা দেওয়ার ঘোষণা দিল যুক্তরাষ্ট্র।

এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেটনো মারসুদির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান। সেখানে তিনি ইন্দোনেশীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, বৈশ্বিক টিকা সরবরাহ ব্যবস্থা ‘কোভ্যাক্স’ প্রকল্পের আওতায় দেশটিকে ৪০ লাখ টিকা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। ‘যত শিগগির সম্ভব’ এই টিকা দেশটিতে পাঠানো হবে।

টেলিফোন আলাপে সুলিভান বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় কার্যত লড়াই করছে ইন্দোনেশিয়ার মানুষ এবং তাদের সহায়তার জন্যই এসব টিকা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া মহামারি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র আরও কিভাবে ইন্দোনেশিয়ার পাশে দাঁড়াতে পারে, সেটা নিয়েও সেসময় আলোচনা করেন তারা।

শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই লকডাউনে অপরিহার্য নয় এমন ব্যবসায়ের জন্য কর্মরত সকল কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করতে হবে। দূরবর্তী শিক্ষা কার্যক্রম চলবে স্কুলগুলোতে। বিপণি বিতান, প্রার্থনালয় ও পার্কের মতো জনসমাগমস্থল বন্ধ ও বাইরে বসে খাওয়া নিষিদ্ধ থাকবে।

স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও জ্বালানি শিল্পের মতো জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো শতভাগ কর্মী নিয়ে চালু থাকবে। যার অর্থ এই খাতে সব কর্মচারী কাজে যেতে পারবেন। এছাড়া অপরিহার্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো ধারণক্ষমতার অর্ধেক কর্মী নিয়ে সচল থাকবে।

ইন্দোনেশিয়ার এই লকডাউন নিষেধাজ্ঞা প্রাথমিকভাবে দুই সপ্তাহ জারি থাকবে। সরকার লকডাউনের মধ্যে দৈনিক করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দশ হাজারে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছে। এখন দেশটিতে দৈনিক বিশ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে।

জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দেশ ইন্দোনেশিয়া। এছাড়া করোনা মহামারিতে এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশগুলোর মধ্যেও দেশটি অন্যতম। গত ১২ দিনের মধ্যে ৮ দিনই দেশটিতে নতুন সংক্রমিত রোগী শনাক্তের সংখ্যায় রেকর্ড হয়েছে। গত শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ায় করোনাভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৫ হাজার ৮৩০ জন এবং মারা গেছেন ৫৩৯ জন।

অন্যদিকে গত বছর করোনা মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে প্রায় ২২ লাখ ২৯ হাজার মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৫৯ হাজার ৫৩৪ জন।

সাম্প্রতিক সময়ে ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের কারণে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই দেশটিতে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির কর্মকর্তারা। এর জন্য ছুটির দিনে মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণ ও ডেল্টার প্রকোপকে দায়ী করা হচ্ছে। 

টিএম