করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন পর্যটকদের জন্য দ্বার বন্ধ রেখেছে, তখন ভিন্ন পথে হাঁটছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ড। মহামারিতে বিপর্যস্ত পর্যটন খাতকে ঘুড়ে দাঁড় করাতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি; পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে থাইল্যান্ডের পর্যটন কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো দেশটির অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র ফুকেট দ্বীপ খুলে দেওয়া হয়েছে।

পর্যটকদের কাছে ছুটি কাটানোর অন্যতম হটস্পট হিসেবে পরিচিত ফুকেটে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক একদল পর্যটক পৌঁছেছেন। করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ কাটিয়ে ওঠা থাইল্যান্ডের এই দ্বীপে পর্যটকরা কোয়ারেন্টাইন মুক্ত অবাধ ছুটি কাটানোর সুযোগ পাচ্ছেন।

প্রথম দফায় যে আড়াইশ’ জন পর্যটক ফুকেটে পৌঁছেছেন; তাদের বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের নাগরিক বলে খবর দিয়েছে ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, ফুকেটে ছুটি কাটাতে পাড়ি জমানো পর্যটকদের কোয়ারেন্টাইনের দরকার হবে না। তবে তারা এই দ্বীপ থেকে থাইল্যান্ডের মূল ভূখণ্ডে ১৪ দিনের মধ্যে ভ্রমণ করতে পারবেন না।

কোয়ারেন্টাইন মুক্ত ছুটি কাটানোর এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফুকেট স্যান্ডবক্স।’ এই কর্মসূচির আওতায় আগামী তিন মাসে থাইল্যান্ডের অর্থনীতিতে ২৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ হবে বলে আশা করছে দেশটির সরকার। যদিও মহামারি পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় পর্যটন খাত থেকে আসা রাজস্বের তুলনায় তা অনেক কম।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, গত বছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর দেশটিতে পর্যটকের সংখ্যা নজিরবিহীনভাবে কমে আসে। ফলে পর্যটননির্ভর দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব হারায়। থাইল্যান্ডের মোট রাজস্বের প্রায় এক পঞ্চমাংস আসে দেশটির পর্যটন শিল্প থেকে।

ফুকেট দ্বীপ খোলার এই উদ্যোগ যদি সফল হয়, তাহলে শিগগিরই দেশটির অন্যান্য দ্বীপও পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন থাই কর্মকর্তারা। আগামী অক্টোবরের মধ্যে সীমান্ত পুরোপুরি খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে থাইল্যান্ডের।

বৃহস্পতিবার ফুকেট দ্বীপ পরিদর্শনে গিয়ে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ূত চান-ওচা বলেছেন, ‌‘আমরা জানি— দ্বীপ খুলে দেওয়ার এই সিদ্ধান্তে ঝুঁকি আছে। কিন্তু থাইল্যান্ডের জনগণের জীবিকা নির্বাহের জন্য আমাদের এই ঝুঁকি মেনে নিতে হবে।’ করোনাভাইরাসের সর্বশেষ প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ের মাঝে পর্যটন খাতকে পুনরায় চালুর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।

বৃহস্পতিবারও দেশটিতে করোনায় ৫৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৫৩৩ জন। একই দিন ফুকেট দ্বীপে করোনার অতি-সংক্রামক ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত হয়েছেন দু’জন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ২ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ।

দেশজুড়ে করোনা মহামারির প্রকোপ চললেও ফুকেট দ্বীপ অনেকাংশে এই ভাইরাসমুক্ত রয়েছে। কোয়ারেন্টাইন মুক্ত পর্যটক টানতে টিকাদান কর্মসূচিও পুরোদমে চলছে দেশটিতে। ইতোমধ্যে থাইল্যান্ডের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষকে অন্তত এক ডোজ করোনা টিকা দেওয়া হয়েছে।   

এসএস