নেই নৌকা, নববধূকে কাঁধে তুলে নদী পেরোলেন স্বামী
মাত্রই বিয়ে করে নববধূকে নিয়ে ফিরছিলেন বাড়িতে। পথেই বাঁধল বিপত্তি। বাড়ি পৌঁছানোর আগে পার হতে হবে নদী। সেখানে নেই কোনো সেতু, ঘাটে নৌকা থাকলেও স্রোতের কারণে যেতে রাজি নন মাঝি। শেষে উপায় না পেয়ে নববধূকে কাঁধে তুলে নিয়ে উত্তাল নদী পার হলেন স্বামী নিজেই। গত সোমবার (২৮ জুন) এমন ঘটনাই ঘটেছে ভারতের বিহারে।
বিয়ের আসরে নববধূর হাতে হাত রেখে একসঙ্গে চলার অঙ্গীকার করেছিলেন স্বামী। বিপদে আপদে একসঙ্গে থাকবেন, বলেছিলেন সে কথাও। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যেন তেমন পরীক্ষা এসে গেল নবদম্পতির সামনে। সামনে খরস্রোতা নদী।
বিজ্ঞাপন
এমন পরিস্থিতিতে নববধূকে নিয়ে নদী পার হতে বিন্দুমাত্র ভাবলেন না বিহারের কিসানগঞ্জের লোহাগড়ের শিবকুমার সিং। নতুন বৌকে তুলে নিলেন কাঁধে। তারপর স্রোত ভেঙে এগোতে লাগলেন। লক্ষ্য, পার হওয়ার মতো জায়গা খুঁজে বের করা। তখনও তার পরনে বিয়ের শেরোয়ানি। পায়ে নতুন জুতো। নতুন বউ সুনীতার পরনে বিয়ের লাল পোশাক। হাত বোঝাই চুড়ি ঝুনঝুন করছে চলার তালে তালে। তিনি আর বাধা দেবেন কী!
এই ভাবে চলতে চলতে অবশেষে মিলল নদীর সোঁতা। সেখানে চওড়া প্রায় এক কিলোমিটার। স্রোতও তুলনামূলক কম। সেই স্রোত ও পানি ঠেলে এক সময়ে তারা গিয়ে উঠলেন ওপারে, বাড়ির কাছে। হইহই করে উঠলেন পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন।
অসাধ্য মনে হলেও নববধূকে কাঁধে করে নদী পার হয়ে বেজায় খুশি ২৬ বছরের যুবক শিবকুমার। নিজে অভিব্যক্তি জানাতে গিয়ে বলছিলেন, ‘লজ্জা লাগছিল। কিন্তু উপায় তো ছিল না। নদীর স্রোত বাড়ছে দেখে মাঝি না করে দিল। আমরা কি তা হলে নদী পেরিয়ে বাড়ি যাব না!’
বিহারের কিসানগঞ্জের বাসিন্দা শিবকুমার বিয়ে করতে গিয়েছিলেন নেপাল সীমান্তের কাছে সিংহীমারি গ্রামে। বিয়ের পরে সোমবার সকালে একুশ বছরের সুনীতাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হন। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গ জুড়ে শুরু হয়েছে বৃষ্টি।
স্থানীয়রা বলছেন, মেচি নদীর সঙ্গে যুক্ত কনকই নদী। মেচি এসেছে নেপাল থেকে, বয়ে গিয়েছে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত রেখা হয়ে। পাহাড়ের এই নদীতে হঠাৎই এ দিন স্রোত বেড়ে যায়। শিবকুমারেরার যখন বাড়ির উল্টো দিকের ঘাটে পৌঁছান, মাঝি জানিয়ে দেয়, এই স্রোতের মধ্যে নৌকা চালিয়ে যেতে পারবেন না তিনি। তার পরেই সদ্য বিবাহিত যুবক ঠিক করে ফেলেন, স্ত্রীকে কাঁধে নিয়েই নদী পার হবেন।
নদীর বিপদের কথা কিন্তু জানতেন শিবকুমার। তিনি বলেন, ‘কনকই নদীর গতিপ্রকৃতি ভাল না। কখন কী হবে, কেউ জানে না।’ তা হলে স্ত্রীকে কাঁধে নিলেন কেন? হাসছিলেন শিবকুমার। তার সঙ্গীরা তখন বলছেন, ‘ছেলে তো বিয়ের পরে প্রথম দিনই বাজিমাত করে দিল!’
সলজ্জ হাসি তখন সুনীতার মুখেও।
টিএম