আফগানিস্তান থেকে জার্মানির সব সেনা তাদের নিজ দেশে ফিরে গেছে। মঙ্গলবার (২৯ জুন) ৫৭০ জন সেনাকে দেশে ফিরিয়ে নেয় জার্মানি। আফগানিস্তানে এখন দেশটির আর কোনো সেনা অবশিষ্ট নেই।

আফগানিস্তানের পরিস্থিতি দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে। তালেবান এখন একের পর এক জেলা দখল করছে। আফগান সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের নিয়মিত সংঘর্ষ চলছে। এই পরিস্থিতিতে জার্মানি তাদের সব সেনা দেশে ফিরিয়ে নিল। আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও তাদের সেনা আফগানিস্তান থেকে ফিরিয়ে নেবে।

দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর জার্মান সেনা আফগনিস্তানে ছিল। জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আনেগ্রেত ক্রাম্প-কারেনবাউয়ের জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে অবস্থানরত সকল সেনা এখন দেশে ফিরে এসেছে। এর মধ্যে দিয়ে এক ঐতিহাসিক অধ্যায় শেষ হলো। জার্মান সেনা পেশাদারিত্ব ও দৃঢ়তার সঙ্গে আফগানিস্তানে তাদের দায়িত্বপালন করেছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

জার্মান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, আফগানিস্তান থেকে তাদের সব সেনা দেশে ফিরছে। সেখানে আর একজনও জার্মান সেনা নেই। তবে নিরাপত্তার কারণেই তারা এনিয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেয়নি। আফগানিস্তানে সবমিলিয়ে জার্মানির ১১০০ জন সেনা ছিল। গত মে মাস থেকে সেনা প্রত্যাহারের কাজ শুরু হয়।

২০০২ সালের জানুয়ারিতে জার্মানির সেনারা আফগানিস্তান যায়। প্রথমে বলা হয়েছিল, তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধ করা নয়, আফগানিস্তানের স্থিতিশীল পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করবে জার্মান সেনারা।

এরপর থেকে ধাপে ধাপে সবমিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ জার্মান সেনা আফগানিস্তান গেছেন। অনেকে একাধিকবারও সেখানে গেছেন। তাদের খরচ সামলাতে দেশটির এক হাজার ২৫০ কোটি ইউরো খরচ হয়েছে। এছাড়া আফগানিস্তানে ৫৯ জন জার্মান সেনা নিহত হয়েছেন।

গত মে মাস থেকে মার্কিন সেনাসহ আফগানিস্তানে অবস্থানরত সকল বিদেশি সেনাকে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরপরই আফগান সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের যুদ্ধ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দেশটির সশস্ত্র ওই গোষ্ঠীটি একের পর এক এলাকা সেনাবাহিনীর কাছ থেকে দখল করে নিচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতেই আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের কাজ চলছে এবং আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের পর দেশটিতে আর কোনো বিদেশি সেনা থাকবে না।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা চালায় জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দা। সেই হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। এরপরই আল কায়দার পৃষ্ঠপোষক তালেবান গোষ্ঠীকে দমন করতে আফগানিস্তানে হামলা করে যুক্তরাষ্ট্র ও সামরিক জোট ন্যাটো।

অভিযানে দেশটির তৎকালীন তালেবান সরকারের পতন হলেও তালেবান গোষ্ঠীকে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। পরিসংখ্যান বলছে, দীর্ঘ প্রায় দু’দশকের এই যুদ্ধে ২ হাজারেরও বেশি মার্কিন সেনা এবং এক লাখেরও বেশি আফগান নাগরিক নিহত হয়েছেন।

টিএম