আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধের হুঁশিয়ারি মার্কিন জেনারেলের
আফগানিস্তান থেকে সকল সেনা প্রত্যাহারের পর দেশটিতে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মার্কিন সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল স্কট মিলার। মঙ্গলবার (২৯ জুন) তিনি একথা বলেন।
গত মে মাস থেকে মার্কিন সেনাসহ আফগানিস্তানে অবস্থানরত সকল বিদেশি সেনাকে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরপরই আফগান সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের যুদ্ধ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দেশটির সশস্ত্র ওই গোষ্ঠীটি একের পর এক এলাকা সেনাবাহিনীর কাছ থেকে দখল করে নিচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
এই পরিস্থিতিতেই আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের কাজ চলছে এবং আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের পর দেশটিতে আর কোনো বিদেশি সেনা থাকবে না।
মঙ্গলবার জেনারেল স্কট মিলার বলেন, বিদেশি সেনারা চলে যাওয়ার পর আফগানিস্তানের নেতারা ঐক্যবদ্ধ হতে ব্যর্থ হলে দেশটি ‘খুব কঠিন সময়ে পড়তে যাচ্ছে’। জেনারেল স্কট মিলার আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন মিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন।
তালেবান গোষ্ঠী একের পর এক নতুন জেলা দখল করার পর সম্প্রতি আফগানিস্তান নিয়ে মুখ খোলে জাতিসংঘ। বৈশ্বিক এই সংস্থাটির মতে, তালেবানের এই অগ্রযাত্রার কারণে আফগানিস্তানে ‘ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির’ সৃষ্টি হতে পারে। এরপরই মার্কিন সামরিক বাহিনীর অন্যতম শীর্ষ এই কমান্ডার তাদের চলে যাওয়ার পর দেশটিতে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানালেন।
মঙ্গলবার এক নজিরবিহীন সম্মেলনে জেনারেল মিলার বলেন, ‘(আফগানিস্তানের) নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন ভালো নয়। বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটা সারা বিশ্বের জন্যই উদ্বেগের।’
চলমান এই সংঘর্ষ ও সহিংসতার জন্য তালেবানকে দায়ী করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা তারা মানছে না। অন্যদিকে বিবিসি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে তালেবান ১০০টিরও বেশি জেলা সরকারি বাহিনীর কাছ থেকে দখল করে নিয়েছে বলে দাবি করেছে।
আফগানিস্তানে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত দেবোরাহ লিয়ন্স সম্প্রতি জানান, দেশটির মোট ৩৭০টি জেলার মধ্যে ৫০টিরও বেশি জেলা ইতোমধ্যেই নিজেদের দখলে নিয়েছে তালেবান। তিনি আফগানিস্তানে ‘ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির’ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘তালেবানের দখলে যাওয়া জেলাগুলো আসলে আফগানিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানীগুলোর পার্শ্ববর্তী এলাকা। অর্থাৎ তালোবান গোষ্ঠী সেখানে নিজের যোদ্ধাদের মোতায়েন রাখছে এবং বিদেশি সেনারা পুরোপুরি সরে যাওয়ার পরই তারা বাকি এলাকাগুলোও দখল করবে।’
এর আগে প্রায় ২০ বছরের আফগান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি কাতারের রাজধানী দোহায় এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে উভয়পক্ষ। সেখানে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং তালেবানের দোহা মুখপাত্র সোহাইল শাহীন উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তি অনুযায়ী, ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সকল বিদেশি সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা নির্ধারণ করেন। সেই অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটিতে অবস্থান করা বিদেশি সেনাদের প্রত্যাহারের কাজ চলছে।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা চালায় জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দা। সেই হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। এরপরই আল কায়দার পৃষ্ঠপোষক তালেবান গোষ্ঠীকে দমন করতে আফগানিস্তানে হামলা করে যুক্তরাষ্ট্র ও সামরিক জোট ন্যাটো।
অভিযানে দেশটির তৎকালীন তালেবান সরকারের পতন হলেও তালেবান গোষ্ঠীকে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। পরিসংখ্যান বলছে, দীর্ঘ প্রায় দু’দশকের এই যুদ্ধে ২ হাজারেরও বেশি মার্কিন সেনা এবং এক লাখেরও বেশি আফগান নাগরিক নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের দীর্ঘতম এই যুদ্ধটির পেছনে দেশটি এ পর্যন্ত ব্যয় করেছে প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন ডলার।
টিএম