দৈনিক করোনা সংক্রমণে রেকর্ড করেছে ইন্দোনেশিয়া। রোববার দেশটিতে করোনায় নতুন আক্রান্ত করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ২১ হাজার। ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সূত্রে জানা গেছে, এর আগে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই দ্বীপবহুল দেশটিতে করোনায় একদিনে এত বেশি আক্রান্তের ঘটনা ঘটেনি।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ইন্দোনেশিয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ‘করোনা পজিটিভ’ শনাক্ত হচ্ছেন। স্বাস্থ্য ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞদের মত, করোনা বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল থাকায় গত মে মাসে ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ পর্যটন এলাকাসমূহে ব্যাপক মাত্রায় ভ্রমণ করেছেন বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম প্রধান এই দেশটির জনগণ। এটি দৈনিক সংক্রমণের সাম্প্রতিক উল্লফনের একটি কারণ। অপর কারণটি হলো করোনাভাইরাসের সবচেয়ে সংক্রামক ধরন ডেল্টা।

ইন্দোনেশিয়ার সংবাদমাধ্যম ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত দু-তিন সপ্তাহে দৈনিক সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে রাজধানী জাকার্তা এবং দেশটির সবচেয়ে জনবহুল ‍প্রদেশ জাভার পশ্চিম ও কেন্দ্রীয় অঞ্চলে।

আরও কয়েক সপ্তাহ সংক্রমণের এই চিত্র অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। ইন্দোনেশিয়া সরকারের কোভিড ১৯ টাস্কফোর্সের মুখপাত্র নাদিয়া তারমিজি এ বিষয়ে এএফপিকে বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে দৈনিক সংক্রমণের হার আরও বাড়বে। আমাদের ধারণা, আগামী ২ অথবা ৩ সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের চুড়ান্ত পর্যায় দেখা যাবে দেশে, তারপর ধীরে ধীরে তা কমে আসবে।’

এদিকে, দৈনিক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়তে থাকায় একদিকে যেমন জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে, তেমনি বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে ইন্দোনেশিয়ার ভঙ্গুর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাকার্তা ও জাভার হাসপাতালগুলোতে ইতোমধ্যে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত সংখ্যক করোনা রোগী ভর্তি আছেন; কিন্তু তারপরও প্রতিদিন হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা নিতে আসছেন হাজার হাজার রোগী। ফলে, অনেক রোগীকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, করোনা পরিস্থিতির এই অবনতিতে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হওয়ায় সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার সরকার কঠোর করোনা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে; তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন দ্রুত লকডাউন আরোপ না করলে সংক্রমণের এই উল্লফন ঠেকানো সম্ভব নয়।

মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এশিয়ার যেসব দেশ সবচেয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে, সে দেশসমূহের মধ্যে অন্যতম ইন্দোনেশিয়া। সরকারী তথ্য অনুযায়ী, মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ায় প্রাণঘাতী এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২১ লাখ ১৫ হাজার ৩০৪ জন এবং মারা গেছেন মোট ৫৭ হাজার ১৩৮ জন।

তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রকৃত আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি। কারণ প্রয়োজনের অনুপাতে দেশটিতে করোনা টেস্ট হয়েছে বেশ কম। এছাড়া ধর্মীয় ও সামাজিক বিধিনিষেধের কারণে অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হননি।

দেশটিতে গণটিকাদান কর্মসূচিও শুরু হয়েছে, কিন্তু তা চলছে খুবই ধীরগতিতে। সরকারী তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ করোনা টিকার ২ ডোজ সম্পুর্ণ করেছেন।

সূত্র: এএফপি

এসএমডব্লিউ