মাহমুদ আব্বাসের পদত্যাগের দাবিতে শনিবার পশ্চিমতীরের রামাল্লায় ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ

ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন ক্ষুব্ধ সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। শনিবার টানা তৃতীয় দিনের বিক্ষোভে তারা ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। আব্বাস সরকারের নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা এক ফিলিস্তিনি নাগরিকের মৃত্যুর পর এই বিক্ষোভ শুরু হয়। মৃত ওই ফিলিস্তিনি নাগরিক মাহমুদ আব্বাসের সরকারের তীব্র সমালোচক ছিলেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা যাওয়া ওই বন্দির নাম নিজার বানাত। মাহমুদ আব্বাসের সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি মারা যান।

নিহত নিজার বানাতের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, আটকের পর ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর দুই ডজন সদস্য বানাতকে লাঠি ও ধাতব রড দিয়ে মাথায় আঘাত করাসহ নির্যাতন করেন। পরে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বানাতের মৃত্যুর কথা জানতে পারেন তারা।

আলজাজিরা জানিয়েছে, আব্বাসের বাহিনীর হাতে নিজার বানাতের আটক ও মৃত্যুর দুইদিন পর শনিবার পশ্চিমতীরের রামাল্লা শহরের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) সদর দফতরের সামনে জড়ো হন শত শত সাধারণ ফিলিস্তিনি নাগরিক। এসময় তারা ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। এছাড়া বিক্ষোভের একপর্যায়ে আব্বাসের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়ান তারা।

এসময় বিক্ষোভকারীদের সাথে ফিলিস্তিনি পতাকা এবং নিহত বানাতের ছবি সম্বলিত পোস্টার দেখা যায়। এছাড়া প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ৮৫ বছর বয়সী মাহমুদ আব্বাসের পদত্যাগেরও দাবি জানান ফিলিস্তিনিরা। একইসঙ্গে ‘আমরা এই সরকারকে ছুঁড়ে ফেলতে চাই’ এবং ‘পদত্যাগ করুন, আব্বাস!’ স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া  ইসমাত মানসুর নামে এক ফিলিস্তিনি বলেন, ‘আমরা সামগ্রীকভাবে একটি রাজনৈতিক সংস্কার চাই। যার মাধ্যমে সত্যিকার অর্থেই মানুষের স্বার্থ প্রতিফলিত হবে।’

আলজাজিরা জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা আব্বাসের দফতরের দিকে অগ্রসর হলে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের সমর্থকরা এসময় তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষ একে-অপরের দিকে পাথর নিক্ষেপসহ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিক্ষোভকারীদের দিকে কাঁদানে গ্যাস ও বিকট শব্দ উৎপন্নকারী স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করে মাহমুদ আব্বাস সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী। কিছু সময় পর আব্বাসের সমর্থনে পাল্টা মিছিল করে তার সমর্থকরা।

উভয়পক্ষের মধ্যে পাথর নিক্ষেপ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের কারণে মিডলইস্ট মনিটরের সংবাদদাতা শাতা হাম্মাদসহ কমপক্ষে পাঁচ সাংবাদিক আহত হয়েছেন। আহত সাংবাদিকদের চারজনই নারী।

এক বিক্ষোভকারীকে আটক করছে মাহমুদ আব্বাস সরকারের নিয়োজিত সাদা পোশাকের পুলিশ

শাতা হাম্মাদ জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা বাহিনী ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ সাংবাদিকদের টার্গেট করে হামলা করেছে। এছাড়া বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করতে ও গ্রেফতারে সাদা পোশাকের পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করেছে আব্বাসের সরকার।

বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের কারণে শনিবার কমপক্ষে ২০ জন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। এদিকে শনিবারের ঘটনার পর এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) আচরণকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ বলে আখ্যায়িত করেছে গাজা ভূখণ্ডের ক্ষমতাসীন দল হামাস।

সূত্র: আলজাজিরা

টিএম