ভবিষ্যতের সকল সিদ্ধান্ত আফগানদের নিজেদের নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৫ জুন) হোয়াইট হাউসে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সঙ্গে প্রথম মুখোমুখি বৈঠকে তিনি একথা বলেন।

রয়টার্স, আলজাজিরা ও ভয়েস অব আমেরিকাসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী প্রত্যাহার অব্যাহত রাখার মাঝেই হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে শুক্রবার বৈঠকে বসেন আফগান ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেখানে বাইডেন জোর দিয়ে বলেন, (আফগানিস্তানে) ওয়াশিংটনের সহযোগিতা এখানেই শেষ হচ্ছে না।

প্রেসিডেন্ট বলেন, দেশটিতে সেনা উপস্থিতি না রেখেও যুক্তরাষ্ট্র বাইরে থেকেই আফগানিস্তানের সেনাবাহিনীকে সহায়তা করে যাবে এবং এর পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহায়তাও অব্যাহত রাখবে।

বাইডেন বলেন, আমরা আপনার সাথেই আছি। এটি মূল্যবোধের বিষয়। এসময় বাইডেনকে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি বলেন, আফগানিস্তানকে রক্ষা করতে গত দুই দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র যে কাজ করেছে, তাতে তিনি কৃতজ্ঞ। তবে এখন দেশটি তালেবানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধের মুখে রয়েছে।

এছাড়া এই মুহূর্তে নিজের অবস্থানকে ১৮৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের সঙ্গে তুলনা করেন আশরাফ গনি। সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ও দক্ষিণের রাজ্যগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে নিজেদের মধ্যে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল।

আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটি মূল্যবোধের বিষয়, একটি ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা বা অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থার মূল্যবোধ। আমরা ঐক্য, সংহতি, ও ত্যাগের বোধের প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং আমরা কিছুতেই ছাড় দেব না।’

তিনি দাবি করেন, ‘শুক্রবার আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলের ছয়টি জেলা তালেবানদের কাছ থেকে ফের নিজেদের দখলে নিয়েছে তার সরকারের বাহিনী। আমরা মকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠবো। তবে তালেবানের সঙ্গে এই মতবিরোধগুলো দীর্ঘ হতে পারে।’

এর আগে শুক্রবার দিনের শুরুতে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে পেন্টাগনে বৈঠক করেন আশরাফ গনি। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিশ্লেষণকে উদ্ধৃত করে সেনা প্রত্যাহারের ছয় মাসের মধ্যেই তালেবানের হাতে তার সরকারের পতন হতে পারে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আফগান প্রেসিডেন্ট হেসে বলেন, আগেও এ ধরনের অনেক ভবিষ্যৎবাণী ছিল এবং সেগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্র-সহ সামরিক জোট ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান থেকে সৈন্য সরাতে শুরু করে দিয়েছে। বাইডেন জানিয়েছেন, চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশটি থেকে সকল বিদেশী সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে। ২০২০ সালে তালেবানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি মেনেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন।

কিন্তু সমস্যা হলো, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো তাদের সেনা যত সরিয়ে নিচ্ছে, আফগানিস্তানে ততই শক্তিবৃদ্ধি করছে তালেবান। আফগানিস্তানে ৩৭০টি জেলা আছে, মে মাসের মধ্যে সেগুলোর ৫০টিরও বেশি তালেবান দখল করে নিয়েছে। আঞ্চলিক রাজধানীগুলোকে প্রায় ঘিরে ফেলেছে তারা। শক্তিবৃদ্ধি করে সেই অঞ্চলগুলোও যে কোনো সময় দখল করে নিতে পারে তালেবান।

টিএম