করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের তাণ্ডব এখনও চলছে, লকডাউন-বিধিনিষেধ-গণটিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে তা থামানোর প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত; কিন্তু এর মধ্যেই দেশটির জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরীতে সক্ষম হয়েছে করোনাভাইরাসের নতুন অভিযোজিত ধরন ডেল্টা প্লাস। 

মঙ্গলবার মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, কেরালা, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, পাঞ্জাব, অন্ধ্র ও জম্মু ও কাশ্মির- এই ৭ রাজ্যে ডেল্টা প্লাসে আক্রান্ত ৪০ রোগী শনাক্তের পর ওই দিনই এটিকে ‘উদ্বেগজনক ধরন’ (ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন) হিসেবে তালিকাভূক্ত করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রে ২১ জন, মধ্য প্রদেশে ৬ জন, কেরালায় ৩ জন, তামিলনাড়ুতে ৩ জন, কর্নাটকে ৩ জন এবং পাঞ্জাব, অন্ধ্র এবং জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যে ১ জন করে ডেল্টা প্লাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

করোনা প্রতিরোধে ভারতের কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্সের উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্য দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি অনলাইনকে জানান, মহারাষ্ট্রের রত্নগিরি ও জলগাঁও জেলা, কেরালার পালাক্কাড় ও পাথনামথিত্তা জেলা এবং মধ্য প্রদেশের ভোপাল ও শিবপুরি জেলায় ডেল্টা প্লাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।

মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এনডিটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, রাজ্যে আক্রান্ত রোগীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। গুরুত্বসহকারে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে যে, সর্বশেষ তারা কোথায় ঘুরতে গিয়েছিলেন এবং করোনা টিকার দুই ডোজ নিয়েছিলেন কি না।

পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে ভিড় ও জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ব্যাপকমাত্রায় টেস্টিং-ট্রেসিং ও টিকাদান বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছে মহারাষ্ট্রের রাজ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

নতুন এই ধরন শনাক্তের প্রেক্ষিতে ভারতের গণটিকাদান কর্মসূচি প্রশাসনের কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞদলের প্রধান ভিকে পল কেন্দ্রীয় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে বলেন, ‘এই আটটি রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে একজন করে উপদেষ্টা ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে পূর্বে যে ব্যবস্থাসমূহ নেওয়া হয়েছিল, আপাতত সেগুলো আরও কার্যকরভাবে অনুসরণ করা হবে। আমাদের লক্ষ্য, আক্রান্তের সংখ্যা যেন এই পর্যন্তই থাকে। যদি এটি বাড়তে থাকে তাহলে মহাবিপর্যয় দেখা দেবে।’

তিনি আরও জানান, করোনার ডেল্টা প্লাস ধরন সম্পর্কে এখন পর্যন্ত খুব কমই জানা গেছে। তবে করোনাভাইরাস গবেষণাবিষয়ক ভারতীয় প্রতিষ্ঠান আইএনএসএসিওজি (ইন্ডিয়ান সার্স-কোভ-২ জিনোম কনসোর্টিয়া)-এর বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই ধরনটি উচ্চ সংক্রামক; পাশাপাশি, ফুসফুসের প্রতিরক্ষা কোষ (রিসেপ্টর সেল) ধ্বংস ও মানবদেহের অ্যান্টিবডি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস করতেও সক্ষম ডেল্টা প্লাস।

ভারত ছাড়াও আরও ৯ টি দেশে ডেল্টা প্লাসের অস্তিত্ব শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। এগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, পর্তুগাল, সুইজারল্যান্ড, জাপান, পোল্যান্ড, রাশিয়া এবং চীনের ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায়।

গত অক্টোবরে প্রথম শনাক্ত হয়েছিল করোনার ভারতীয় ধরন ডেল্টা। করোনার অভিযোজিত ধরনগুলোর মধ্যে ডেল্টাকে সবেচেয়ে উচ্চ সংক্রামক ও বিধ্বংসী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ভারতে চলমান করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে যে ব্যাপক সংখ্যক আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তার জন্যও ডেল্টাকে দায়ী করেছেন আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য ও জীবনু বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৮০ টি দেশে ডেল্টার অস্তিত্ব শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছর মার্চে ভারতে শনাক্ত হয়ে ডেল্টার পরিবর্তিত রূপ ডেল্টা প্লাস।

ভারতের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভারতে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন অভিযোজিত ধরন ডেল্টা প্লাস নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন আছে দেশটির সরকার। উদ্বেগের প্রধান কারণ- প্রচলিত করোনা টিকা ডেল্টা প্লাসের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে কি না। কেননা এর আগে গবেষনায় দেখা গেছে, করোনা টিকা কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনের ডোজকে ফাঁকি দিতে সক্ষম ডেল্টা প্লাসের পূর্বসূরী ধরন ডেল্টা।

সূত্র: এনডিটিভি অনলাইন

এসএমডব্লিউ