চীনের টিকা নিয়ে দেশে দেশে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ
করোনাভাইরাস মহামারি থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে টিকা। কিন্তু অধিকাংশ দেশের হাতে সেটা নেই। এ কারণে বিশ্বের অনেক দেশই চীনের সহজলভ্য করোনা টিকার দিকে ঝুঁকেছিল।
তবে চীনা ভ্যাকসিনে আস্থা রেখে টিকাদান কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়ার পরও সেসব দেশে ফের বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। আর এ কারণেই ভাইরাস মোকাবিলায়, বিশেষ করে ভাইরাসের নতুন ধরনগুলো মোকাবিলায় চীনা টিকা কার্যকর নয় বলে গুঞ্জন উঠতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস।
বিজ্ঞাপন
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলা এবং দেশের নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরিয়ে আনতে পশ্চিমা দেশগুলোর টিকাগুলোর তুলনায় সহজলভ্য চীনের কোভিড-১৯ টিকা কিনেছিল মঙ্গোলিয়া, সিসিলিস এবং বাইরাইনের মতো কয়েকটি দেশ। মানুষের মাঝে সেই টিকা প্রয়োগের পরও এখন আবার সেসব দেশে করোনা সংক্রমণে উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। আর তাই করোনা মোকাবিলায় চীনা টিকা কার্যকর নয় বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
আওয়ার ওয়ার্ল্ড নামক একটি ডেটা ট্র্যাকিং সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সিসিলিস, চিলি, বাইরাইন ও মঙ্গোলিয়া চীনের করোনা টিকা আমদানি করেছিল। পরে সেই ভ্যাকসিন দিয়ে দেশগুলো তার জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ থেকে ৬৮ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়। টিকাদানের গতির বিচারে এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রকেও পেছনে ফেলে দিয়েছিল।
কিন্তু এরপরও সাম্প্রতিক সময়ে এসব দেশে করোনা সংক্রমণ ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া গত সপ্তাহে করোনাভাইরাসের সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হওয়া ১০টি দেশের মধ্যেও রয়েছে সিসিলিস, চিলি, বাইরাইন ও মঙ্গোলিয়া।
ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের ভাইরোলজিস্ট জিন ডংইয়ান বলছেন, ‘(করোনাভাইরাস মোকাবিলায়) চীনের টিকা যদি যথেষ্ট ভালো হতো, তাহলে ওই দেশগুলোতে আমরা এই চিত্র দেখতে পেতাম না। এই সমস্যার প্রতিকার বা সমাধান করাটা চীনের দায়িত্ব।’
অবশ্য জনসংখ্যার বিশাল সংখ্যক অংশকে টিকা দেওয়ার পরও সংক্রমণ ফের মাথাচাড়া দেওয়ার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা করোনা বিথিনিষেধ শিথিল এবং অসতর্কতাকে দায়ী করেছেন।
সিসিলিসের পরে বিশ্বে টিকাদানে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ইসরায়েলে প্রতি ১০ লাখে প্রায় ৫ জন (৪.৯৫ জন) নতুন করে ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন। দেশটি মানুষের মাঝে ফাইজারের টিকা প্রয়োগ করেছিল। অন্যদিকে চীনা টিকা সিনোফার্মের ওপর আস্থা রাখা সিসিলিসে প্রতি ১০ লাখে নতুন সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ৭১৬ জনেরও বেশি।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, চীন-সহ বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশ তাদের নাগরিকদের মধ্যে চীনা টিকা প্রয়োগ করেছে। তবে দেশের সকল মানুষকে তারা টিকার আওতায় আনলেও ভাইরাসের বিরুদ্ধে তাদের সুরক্ষা কার্যত আংশিক। এর অর্থ- দেশের সকল মানুষকে টিকা দেওয়ার পরও লকডাউন জারি রাখতে হবে, দেশের মানুষের নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি নিয়মিত করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা এবং দৈনন্দিন জীবনে বিধিনিষেধ মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর জারি রাখতে হতে পারে।
এদিকে করোনা মহামারির মধ্যে আরও বড় বৈশ্বিক পরাশক্তিতে পরিণত হতে ভ্যাকসিন কূটনীতিকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখে থাকে বেইজিং। সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে ইতোমধ্যেই টিকা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। দেশটির দাবি, এসব টিকা সহজে সংরক্ষণ ও পরিবহনযোগ্য।
চীনের উপহারের ভ্যাকসিন পেয়ে মঙ্গোলিয়া খুব দ্রুতই টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে এবং জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ মানুষকে টিকা দিয়ে করোনা বিধিনিষেধ শিথিল করে দেয়। কিন্তু এরপরই ফের দেশটিতে করোনার প্রকোপ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। গত রোববার দেশটিতে ২ হাজার ৪০০ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ এক মাসের মধ্যে দেশটিতে নতুন সংক্রমণ ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে চীনা টিকার যেকোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিয়েছে বেইজিং। এক বিবৃতিতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে চীনা টিকার কোনো যোগসূত্র দেখতে পারছেন না তারা।
তাদের দাবি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে- করোনার নতুন সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনতে না পারার কারণে সংক্রমণ ফের ছড়িয়ে পড়ছে। আর তাই চীনা টিকা প্রয়োগ শুরু করা দেশগুলোকে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে দ্রুতগতিতে ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ অব্যাহত রাখতে হবে।
নিউইয়র্ক টাইমসের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ‘বিভিন্ন প্রতিবেদন ও তথ্যে এটাও দেখা যাচ্ছে- চীনের টিকা নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য। এছাড়া মহামারি প্রতিরোধে চীনা টিকা বেশ ভালো ভূমিকা রাখছে।’
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, এএনআই
টিএম